স্টাফ রিপোর্টার ॥ আনন্দক্ষণে শামিল হলো জনকণ্ঠ সাংবাদিক পরিবারের সকলে। জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের জন্য শুক্রবার দিনটি ছিল অন্য রকম। শুধু বিশেষ দিন বললে ভুল হবে, বিশেষ মুহূর্ত ও বিশেষ ক্ষণও বলা চলে। এদিন জনকণ্ঠের সকল বিভাগে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেন আন্দনের সীমা ছিল না। নাচে, গানে, হাসি আর আনন্দেই মাতোয়ারা সবাই। এমনই জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জনকণ্ঠের বিশেষ আয়োজন জনকণ্ঠ সাংবাদিক ফ্যামিলি ডে।
প্রতিদিন সকালে উঠে যেখানে সংবাদের পেছনে দৌড়াতে হয় সাংবাদিকদের। শুক্রবার দিন ঠিক তার উল্টো ছিল। সবাই একে একে পরিবার নিয়ে হাজির হন জনকণ্ঠ ভবন মিলনায়তনে। উদ্দেশ্য একটাইÑ বিশেষ এই আয়োজনে অংশ নেয়া। একান্ত একটি দিন হাসি আর আনন্দে মেতে ওঠা। সবার পরিবারের মিলনে সৃষ্টি হয় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের। অনেকদিন পর সকলের পরিবারের সঙ্গে পরিবারের দেখা হওয়ায় ভাবের বিনিময় চলতে থাকে দিনজুড়ে। থেকে থেকে সেলফিতে মাতোয়ারা ছিল সকলে। গল্প, হাসিঠাট্টাতে মেতে ওঠেন। ফ্যামিলি ডে উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনের মধ্যে ছিল গান, নৃত্য, কবিতা পাঠ, র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণ। সবশেষে মধ্যাহ্ন ভোজ। জনকণ্ঠ ভবনের হলরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। রেজিস্ট্রেশনের পর শুরু হয় মূল পর্ব গানের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বর্ণ ব্রান্ডের শিল্পীরা গান গেয়ে শোনান। এই সুর আর কারো কণ্ঠ থেকে ভেসে আসেনি। এলো জনকণ্ঠের এক সহকর্মীর কণ্ঠ থেকে। অনেকেই জানতেন না তৌফিক অপুর কণ্ঠে এমন মায়াময় জাদু আছে। সেই জাদু যে এক অপুর কণ্ঠেই রয়েছে তা নয়। শর্মী চক্রবর্তী আর গৌতম পা-েও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাতিয়ে তোলেন গানের আসর। এছাড়া শিশুশিল্পীদের নৃত্য ও গান পরিবেশনা অন্য ধরনের আবহ সৃষ্টি করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনকণ্ঠের সম্পাদক ও গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ভাইস-চেয়ারম্যান শামিমা এ খান, পরিচালক মিশাল এ খান ও তাঁর স্ত্রী গুললারা খান এবং মেয়ে আইজা লিন খান, পরিচালক জিশাল এ খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জনকণ্ঠ সম্পাদক এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জনকণ্ঠের জন্য প্রাণবন্ত একটি দিন। সীমিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবাই আনন্দে মাতোয়ারা। এমন দিন প্রত্যেক দিন আসে না। তবে ফিরে ফিরে আবার এমন দিন বার বার আসবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। তিনি নিয়মিতভাবে এমন আয়োজনের আশ্বাস দিয়ে বলেন আগামীতে সকলে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনকণ্ঠের প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম খান, ডেপুটি এডিটর ওবায়দুল কবির, সিটি এডিটর কাওসার রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি শংকর কুমার দে, ক্রীড়া সম্পাদক মজিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি উত্তম চক্রবর্তী, তপন চক্রবর্তী, ফটো এডিটর হাসানুজ্জামান তরুণ। এছাড়াও বিশ্বকাপ বাজিতে অংশ নেয়া জনকণ্ঠের বিভিন্ন বিভাগের সাংবাদিক ও তাদের ফ্যামিলির ২শ’র বেশি সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
জনকণ্ঠের ডেপুটি এডিটর ওবায়দুল কবির স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সকালে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। তিনি সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমাদের সহকর্মীদের সকলেই এসে গেছেন। এখন আমরা মূল অনুষ্ঠানে প্রবেশ করব। আজ আমাদের দিন। আমরা নিজেদের মতো করে এই আনন্দ আয়োজনে সকলে অংশ নেব। আশা করছি, আজকের দিন সকলের কাছে উপভোগ্য হবে। এর পরেই ফ্যামিলি ডের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে বেলা দুইটা পর্যন্ত চলে একটনা গান পরিবেশন। বর্ণ ব্যান্ডের পরিবেশনায় তৌফিক অপু নিজের কণ্ঠের প্রথম পরিবেশন করেন ‘মান শুধু মন ছুঁয়েছে, সেই মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে কি না আমি তা জানি না।’ এরপর একের পর এক গান পরিবেশন করেন জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার গৌতম পা-ে, শর্মী চক্রবর্তী, বর্ণের শিল্পী হেলাল, শর্মী, শিশুশিল্পী অন্তিপা। নৃত্য পরিবেশন করেন শিশু অন্তিপা ও বর্ষা।
গৌতম পা-ে ভুপেন হাজারিকার জনপ্রিয় গান ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয় ও এ দোলা দোলা’ গানটি পরিবেশন করেন। এছাড়া জনকণ্ঠের শর্মী চক্রবর্তী অনুষ্ঠানে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, অন্তরে পারলাম না বুঝাইতে, কেমনে ভুলিব আমি বাঁচিনা তারে ছাড়া’ গান পরিবেশ করেন। শিশুশিল্পী অন্তিপা তার সুন্দর শিশুকণ্ঠে উপস্থাপনা করে ‘আমরা সবাই রাজা তোমাদের এই রাজার রাজত্বে’ গানটি। এছাড়া বাজে বংশী বাজে গানের তালে সুন্দর নৃত্য পরিবেশ করে সবাইকে মুগ্ধ করে দেন। শিশুশিল্পী বর্ষার আজি বাহালো করিয়া বাজাও রে দোতরা, সুন্দরী কমলা নাচে, রুমঝুম রুমঝুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল গানের সুরে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা করে। জকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের লেখা কবিতা ‘পলাতক শব্দের সময়’ আবৃত্তি করেন জনকণ্ঠের সাংবাদিক সাজু আহমেদ।
তৌফিক অপুর পরিবেশনায় কুমার বিশ্বজিৎয়ের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে হৃদয়ের কোঠরে রাখব’ গানের সুরে সবাইকে মাতোয়ারা করে তোলে। এ সময় যে সবাই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। অংশ নেন ফ্রি নৃত্যে। এরপর থেকেই চলতে থাকে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। সবাই সমসুরে গানে অংশ নেয়। যে যার মতো করে নেচে গেয়ে আনন্দ করতে থাকে। তখন এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। সবার মনোযোগ সেদিকে আকর্ষণ করে। এরপর চলতে থাকে এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে, গুনতে দিস তুই কিছু মোরে। অর্ণব ব্রান্ডের শিল্পীর কণ্ঠের আমার ঘুম ভাঙ্গাই গেল রে, মরার কোকিলে, হিন্দী গান উললা উলালা এবং লুঙ্গি ড্যান্সের সুরে আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকে সবাই। এর আগে প্রাণ সখিরে ওই শোন কদম্ব ডালে বংশী বাজায় কে গানের সুরের আবহ তৈরি করা হয় শিশুদের জন্য। এ আবহে জনকণ্ঠের পরিচালক মিলাশ এ খানের শিশুসন্তান আইজা লিন খানের সঙ্গে অনুষ্ঠানে শিশুরাও নৃত্যে অংশ নেয়।
এখানেই শেষ নয়। এর পর আসে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। যেখানে ছিল র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এ পর্ব পরিচালনা করেন জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান। এর আগে সব শিশুর মাঝে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেয়া হয়। এরপরই আসে র্যাফেল ড্র। তিনটি আকর্ষণীয় পুরস্কারের মধ্যে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান। এ সময় সমস্বরে তাঁকে অভিনন্দন জানায় সবই। পুরস্কার হিসেবে তিনি পান ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা বিমান টিকেট। তবে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। ডেপুটি এডিটর ওবায়দুল কবির এ পুরস্কারটি তুলে দেন। দ্বিতীয় পুরস্কারটি লাভ করেন জনকণ্ঠের সিনিয়র সাব এডিটর বিপুল রঞ্জন নাথ। এছাড়া তৃতীয় পুরস্কার লাভ করেন স্টাফ রিপোর্টার মনোয়ার আহমেদ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ছিল একটি করে মোবাইল সেট। গ্লোব জনকণ্ঠের ভাইস-চেয়ারম্যান শামিমা এ খান পুরস্কার দুটি তুলে দেন। এর পরই অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পর্ব। তার জন্য এই ফ্যামিলি ডে’র আয়োজন। যাকে উপলক্ষ করে এই মিলনমেলা। গত বছর জুনে শুরু হয় মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবল। যার ঢেউ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়ে। বাদ যায়নি জনকণ্ঠেও। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ন্যায় না হলেও এ উপলক্ষে জনকণ্ঠ পরিবারের জন্য ছিল বাজির আয়োজন। মাসব্যাপী এ খেলায় জনকণ্ঠের বিভিন্ন বিভাগের ৫৯ জন এ বাজিতে অংশ গ্রহণ করেন। সবার মধ্যে চেষ্টা ছিল এ বাজি প্রতিযোগিতায় কে প্রথম অধিকার অর্জন করবে। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে স্টাফ রিপোর্টার মনোয়ার হোসেন ৭৯০ পয়েন্ট পেয়ে বাজিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মাত্র ১০ পয়েন্ট কম পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন রফিকুল ইসলাম রাজু। তিনি লাভ করেন ৭৮০ পয়েন্ট। এছাড়া যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন স্টাফ রিপোর্টার গৌতম পা-ে ও দুলাল আচার্য। তারা উভয় ৭৫০ পয়েন্ট লাভ করেন। বাজি খেলায় প্রথম স্থান অধিকারের স্বীকৃতিস্বরূপ মনোয়ার হোসেনের হাতে তুলে দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে সাড়ে ৭ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বিজয়ীদের মাঝে এ পুরস্কার তুলে দেন। জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, উপদেষ্টা তোয়াব খান, নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়সহ অন্যদের মধ্যে বাজি খেলায় অংশ নেনÑ প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম খান, ডেপুটি এডিটর ওবায়দুল কবির, সিটি এডিটর কাওসার রহমান, বার্তা সম্পাদক আলী আহসান, ক্রীড়া সম্পাদক মজিুবর রহমান, ফটো এডিটর হাসানুজ্জামান তরুণ, বিশেষ প্রতিনিধি শংকর কুমার দে, উত্তম চক্রবর্তী, তপন বিশ্বাস, সিনিয়র রিপোর্টার ফিরোজ মান্না, বিকাশ নারায়ণ দত্ত, শরীফুল ইসলাম, বিভাষ বাড়ৈ, নিখিল মানখিন, মিথুন আশরাফ, রাজন ভট্টাচার্য, রশিদ মামুন, মোরসালিন মিজান, স্টাফ রিপোর্টার শাহীন রহমান, হামিদ উজ জামান মামুন, মিরাজ বিলুয়া, আরাফাত মুন্না, এম শাজাহান, নিয়াজ আহমেদ লাবু, তৌহিদুর রহমান, জাহিদুল আলম জয়, অপূর্ব কুমার, রহিম শেখ, গোলাম মোস্তাফা, রুমেল খান, মামুন উর রশিদ। সিনিয়র সাব-এডিটর এমএ হায়দার খান, বিপুল রঞ্জন নাথ, মীর লিয়াকত আলী, আফজাল হোসেন, সাব-এডিটর পরিতোষ কুমার তুষার, নাজিম মাহমুদ হাসান, আনোয়ারুল সাজু, ইমরান হোসেন, সোহেল আশরাফ,ইব্রাহিম নোমান, তৌফিক অপু, রাহুল শর্মা, হাফিজুর রহমান, আবু সুফিয়ান। স্টাফ ফটো সাংবাদিক শেখ মামুন, আব্দুল হান্নান, জীবন ঘোষ, কামরুল হাসনাত জসিম, ইলিয়াস মাহমুদ, ডার্করুম সহকারী আজিজুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাকিউজ্জামান নিপুন, আবু সুফিয়ান। বেলা আড়াইটার দিকে মধ্যাহ্ন ভোজের মাধ্যমে শেষ হয় বহু আকাক্সিক্ষত ফ্যামিলি ডে’র অনুষ্ঠান।