ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা নয় ॥ শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমন

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা নয় ॥ শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপিকে খুনী-সন্ত্রাসীদের দল আখ্যায়িত করে তাদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বরং চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা কঠোর হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যতদিন বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, ততদিনই সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবেলায় যা যা করার তাই করবে। সর্বশক্তি দিয়ে দেশকে আইএস বানানোর চক্রান্ত রুখে দেয়া হবে। নাশকতার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার করা হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আর মানুষ হত্যা করতে দেয়া হবে না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার কঠোর থাকবে। দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি, শ্রেণী-পেশার মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দেশকে জঙ্গীরাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ‘নাগরিক ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে দলটি বলেছে, এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। মুক্তবুদ্ধির সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পারলে বাংলাদেশেও লেবানন, সিরিয়ার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) আসবে। আর এটা আনতেই খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে দলের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসের আরেক রূপ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এদের মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদের আরও বেশি সচেতন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বৈঠক সূত্রটি জানায়, বৈঠকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, দলের জেলা-মহানগর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন। বৈঠকে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত নেতাদের পুনরায় দলে ফেরার আবেদন সম্পর্কে দলের সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাত বিভাগের সম্মেলনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডাররা আবেদনগুলো বিবেচনা করে সুপারিশ করবেন, কাকে কাকে দলে ফেরত আনা যায়। সুপারিশ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বৈঠকে গাজীপুর মহানগর কমিটি অনুমোদনের পাশাপাশি ২১ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, হরতাল-অবরোধে যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, কিভাবে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব? সংলাপে তাদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলব? তাদের সঙ্গে মানুষ পুড়িয়ে মারা নিয়ে আলোচনা করব? তিনি বলেন, বিএনপি একাত্তরের মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আসলে শক্তিশালী সরকারের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা নয়। সিরিয়া বা লেবাননে কী হচ্ছে তা সবাই জানে। খালেদা জিয়ার আন্দোলনের নামে এ সহিংসতার লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচন নয়, তিনি বাংলাদেশে লেবানন ও সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কি জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সমঝোতা করছে? বরং এই পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আসন্ন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও আসে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার বিষয়টিও আইনজীবী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীকে।
×