ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির নীরবতা বিপজ্জনক

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মোদির নীরবতা বিপজ্জনক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা ভারতের সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পত্রিকাটির ভাষায় বিপজ্জনক নীরবতার সমালোচনা করেছেন। বুধবার পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বোর্ডের খুবই কড়া ভাষায় লেখা এক সম্পাদকীয়তে এ সমালোচনা করা হয়। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতে বিরাজমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নটি উত্থাপন করেন। খবর হিন্দু অনলাইনের। ওই সম্পাদকীয়তে ভারতের গির্জাগুলোর ওপর হামলা ও ‘ঘর ওয়াপসি’ বা ধর্মান্তকরণের খবরগুলো উল্লেখ করা হয়। এতে চলতি মাসে অযোধ্যায় ধর্মান্তকরণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রস্তাব করায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে (ভিএইচপি) চিহ্নিত করা হয়। দলটি আগুন নিয়ে খেলছে বলে এতে মন্তব্য করা হয়। সম্পাদকীয়তে অনুমান ব্যক্ত করা হয় যে, এরূপ অস্বস্তিকর অসহিষ্ণুতার মুখে মি. মোদির অব্যাহত নীরবতা ক্রমেই এ ধারণার জন্ম দেয় যে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী ডানপন্থীদের প্রান্তিক অংশগুলোকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বা তা করতে চান না। সম্পাদকীয়ের শুরুতে প্রশ্ন করা হয় যে, ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে কথা বলতে হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য চাই খ্রীস্টান উপাসনালয়গুলোতে পরিচালিত হামলার ঘটনাগুলো ভারতের নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করতে এবং নিরাপত্তা দিতে নির্বাচিত হয়েছেন এমন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন আওয়াজ বের করতে পারেনি। তিনি জোরপূর্বক ও অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে খ্রীস্টান এবং মুসলিমদের ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে তিনি কোন পদক্ষেপও নেননি। সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি খ্রীস্টান গির্জাতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। গত ডিসেম্বরে পূর্ব দিল্লীর সেই সেবাস্টিয়ানস চার্চে বড় ধরনের অগ্নিকা- ঘটে। আগুন নেভানোর পর কেরোসিনের কড়া গন্ধ পাওয়া যায় বলে গির্জার যাজক জানান। সোমবার নয়াদিল্লীর সেন্ট আলকোনসাস চার্চ ল-ভ- করা হয়। উপাসনা অনুষ্ঠানের পত্রাদি নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু নগদ অর্থ-ভরা সাহায্য সংগ্রহের বাক্সগুলো অক্ষত থেকে যায়। এসব হামলায় ভীত হয়ে ভারতের ক্যাথলিক বিশপস’ কনফারেন্স ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতি সমুন্নত রাখতে এবং ভারতীয় খ্রীস্টানরা যে তাদের নিজ দেশে সুরক্ষিত ও নিরাপদ তাদের সেই নিশ্চয়তা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। গণ ধর্মান্তকরণ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে আগ্রাতে প্রায় ২০০ মুসলিমকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা হয়। জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০০ খ্রীস্টানকে হিন্দু ধর্মে ‘পুনর্দীক্ষিত’ করা হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মতো কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলো অহিন্দুদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নেয়া ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচীর প্রতি তাদের সমর্থন গোপন করেনি। ভারতীয়দের শতকরা ৮০ ভাগ হিন্দু, কিন্তু ভিএইচপির প্রধান তোগারিয়া বলছেন, তার সংগঠনের লক্ষ্য হলো শতকরা ১০০ ভাগ হিন্দুর এক দেশ। এ লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র উপায় হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তাদের ধর্ম পালন করতে না দেয়া। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয় যে, ভিএইচপি চলতি মাসে অযোধ্যায় ৩ হাজার মুসলিমের গণ ধর্মান্তকরণের পরিকল্পনা করছে বলে জানা যায়। ১৯৯২ সালে হিন্দু জঙ্গীদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ঘটনা থেকে ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখা দেয়। এতে ২০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়। ভিএইচপি জানে তারা আগুন নিয়ে খেলা করছে। এতে বলা হয়, মি. মোদি ভারতের উন্নয়নের উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
×