ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগে বাধা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগে বাধা

পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই বন্ধ করতে পেশ করা এক যৌথ ফরাসী-জার্মান প্রস্তাব শনিবার গুরুতর বাধার মুখে পড়ে। মিউনিখে এক নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা ইউক্রেনীয় ভূখ- থেকে রাশিয়াকে সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে বলে দাবি জানান। আর রুশ কর্মকর্তারা ইউক্রেনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ান, বিবিসি ও এএফপির। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের ওই শ্রমসাধ্য প্রয়াসকে সংঘাতের দ্রুত বিস্তার রোধের সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে দেখছে ইউরোপীয় সরকারগুলো। ওই যুদ্ধ ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে কয়েক মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে। নতুন অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির রূপরেখাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ নতুন প্রস্তাবটি গ্রহণ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়ে। দ্রুত মীমাংসা ছাড়া পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং কিয়েভের পাশ্চাত্যপন্থী সরকারের মধ্যকার সংঘর্ষ আরও বিস্তৃত ও ঘনীভূত হতে চলছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি কোন অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়, তা হলে বিবদমান বাহিনীগুলোর বিভক্তিকরণ রেখা কোনটি হবে সেটিই সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়। ইউক্রেনীয়রা চায়, গত সেপ্টেম্বরে সম্মত হওয়া অস্ত্রবিরতির রেখাই হবে বর্তমান অস্ত্রবিরতির রেখা। আর রুশপন্থী বিদ্রোহীরা চায় তারা তাদের সর্বশেষ হামলায় যেসব ভূখ- দখল করে, সেগুলো অস্ত্রবিরতির পর তাদের দখলেই থাকবে। পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর নতুন পরিকল্পনা সমর্থন করতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান। পুতিন যে ইউক্রেনে শান্তি চান, তা প্রমাণ করতে তার ওপর চাপ দেন ওই নেতারা। ওই ফরাসী-জার্মান শান্তি উদ্যোগ সর্বাত্মক যুদ্ধ নিবৃত্ত করার সর্বশেষ উপায় হতে পারে বলে তারা বিবদমান উভয় পক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছেন। রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করছে বলে জানা যায়। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো অস্ত্র সরবরাহসহ আরও সহায়তা দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানান। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল তাদের প্রস্তাবের প্রতি রুশ মনোভাবে ‘হতাশা’ ব্যক্ত করলেও বলেন, সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে রণাঙ্গন থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব নিয়ে পরীক্ষা চালানো যেতে পারে। তিনি ও ওলাঁদ তাদের প্রস্তাব তুলে ধরতে শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কো গিয়েছিলেন। মেরকেল এ প্রস্তাবের ভবিষ্যত নিয়ে শনিবার হতাশই ছিলেন। তিনি ওই বার্ষিক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেন, এটি সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে কিনা তা অনিশ্চিত, কিন্তু আমার ও ফরাসী প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত। ইউক্রেনে অস্ত্রবিরতি আনার ফরাসী-জার্মান পরিকল্পনায় সম্মুখ রণাঙ্গন বরাবর সামরিক বাহিনীমুক্ত এক এলাকা গঠনের কথা বলা হয়। এতে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৭০ কিলোমিটার জুড়ে এক বাফার জোন গড়ে তুলতে এবং সেপ্টেম্বরে মিনস্কে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক অস্ত্রবিরতি রেখায় রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের সরিয়ে নিতে বলা হয়। এর বিনিময়ে ইউক্রেনের পূর্ব প্রদেশগুলোকে আরও স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে বলে প্রস্তাবটিতে উল্লেখ করা হয়। মেরকেল স্বীকার করেন যে, মিনস্ক চুক্তি মেনে চলতে রাশিয়ার ব্যর্থতা হতাশাজনক। রাশিয়ার দেয়া নিশ্চয়তা প্রসঙ্গে তিনি অভিজ্ঞতা সুখদায়ক হয়নি বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, আদৌ কোন চুক্তিতে না পৌঁছানো এর উত্তর হতে পারে না। আমাদের বার বার চেষ্টা করতে হবে। বিদ্রোহীদের সহায়তা করার দায়ে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানাতে পশ্চিমা নেতারা একমত হন। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্কটাপন্ন সৈন্যবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হবে কিনা, তা নিয়ে তারা ভিন্নমত হয়। কিয়েভকে উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম দেয়ার পক্ষে ওয়াশিংটন ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু এরূপ কোন পদক্ষেপ পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটাবে বলে মেরকেল মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি এমন পরিস্থিতির কথা ভাবতে পারি না, যেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য উন্নততর অস্ত্র প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তিনি সামরিক দিক দিয়ে হেরে যাবেন বলে ভাবিয়ে তুলতে পারে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা দিয়ে যাব, যুদ্ধে উৎসাহ যোগাতে নয়, বরং ইউক্রেনকে আত্মরক্ষা করতে দিতে। ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত বর্ম ও হেলমেটের মতো প্রাণঘাতী নয় এমন সামরিক সরঞ্জাম প্রদান করে এসেছে।
×