ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জুবায়ের হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৮ ফেব্রুয়ারি ॥ ‘তুমি টিভিতে দেখবা। তুমি একা দেখবা না। বাংলাদেশের সবাই দেখবে।’ সকল টিভিতে জুবায়েরকে দেখানো হলো, কিন্তু জীবন্ত নয়। মৃত। জাবি শিক্ষার্থী নিহত জুবায়েরের মা হাসিনা আহম্মেদ জুবায়েরের এমন সব কথা বলে অঝোর ধারায় কান্না জুড়ে দেন। বাবা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘দেশের সব মানুষকে ফাঁসি দিলেও আমার সন্তানকে আর ফেরত পাব না।’ রবিবার দুপুরে জুবায়ের আহম্মেদ বাবু হত্যার রায়ের খবর শোনার পর বাবা-মা বিলাপ করতে থাকেন। এ্যালবাম দেখে সন্তানের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। চোখের পানি বইতে থাকে বিরামহীন। বিমর্ষ হয়ে পড়েন গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে। রায়ে তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ রায়ে পাঁচ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় বিজ্ঞ আদালত। তোফায়েল আহম্মেদ দাবি জানিয়েছেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে এ রায় কার্যকর করার। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মদিনাবাগ বাসায় রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কান্নাভেজা কণ্ঠে সরকারের আন্তরিকতায় প্রশাসনের সহায়তায় এ রায় ঘোষণায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বিচারক, যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমের প্রতি এ দম্পতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তোফায়েল আহম্মেদ মৃদু ক্ষোভ প্রকাশ করেন সব সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে না পারায়। দ-প্রাপ্ত আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় গোটা পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত রয়েছেন। তিনি জানান, ছেলে জুবায়ের হত্যার পর সন্ধ্যার পরে ঘরের বাইরে বের হন না। নৌ-বাহিনীর সাবেক সদস্য তোফায়েল আহম্মেদ জানান, তিনি আশা করছিলেন ১৩ আসামির সবার ফাঁসি হবে। প্রথম দফা ৫ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার কথা শোনার পর থেকেই তোফায়েল আহম্মেদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রবিবার বাসায় ফেরেন। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭তম ব্যাচের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র জুবায়ের খুন হয়। স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা শেষে বের হলে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের একদল ক্যাডার। পিটিয়ে অচেতন অবস্থায় জুবায়েরকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল হাসপাতালে ফেলে রাখে ওই সন্ত্রাসীরা। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে জুবায়ের মারা যায়। জাবি পরিবার জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহম্মেদ হত্যাকা-ের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল। রবিবার জুবায়ের হত্যার চার্জশীটভুক্ত আসামিদের মধ্যে ৫ জনের ফাঁসি এবং ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। এ রায়ের মধ্য দিয়ে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যার বিচার হলো। এদিকে হত্যার রায় প্রকাশিত হওয়ার খবরে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীরা। সাক্ষী প্রদানকারী তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট ও বর্তমান পিপলস্ ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য আব্দুল মান্নান চৌধুরী রায়ে সন্তোষ জানিয়ে বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে ছাত্র হত্যার বিচারের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। তৎকালীন প্রশাসন যেভাবে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিল আজ তা সফল হতে চলেছে।
×