ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ কমেছে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খেলাপি ঋণ কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপনসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমেছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। তবে গত এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ এর শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের শ্রেণীকৃত ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯.৬৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রান্তিকে এ হার ছিল ১১.৬ শতাংশ। ২০১৪ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে মোট ও শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। এদিকে শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে ডিসেম্বর শেষে মোট আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা। তার মানে নিট আদায় আগের প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। প্রভিশন না করা নিট খেলাপি ঋণের হার ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২.৬৮ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.২৭ শতাংশ। তবে গত এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য মতে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপলী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৩২ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর বিদেশী ব্যাংকগুলো শ্রেণীকৃত ঋণ হচ্ছে এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ শেষে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ওই সময় মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছিল খেলাপি। এপ্রিল-জুন শেষে সার্বিক শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরপর জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ৫৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এতে করে মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়। কিন্তু বছর শেষে সেটা কমে হয়েছে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের নীতিমালা বিশ্বমানে উন্নীত করা, গুণমানের ঋণ প্রদান ও ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার প্রভাবে শ্রেণীকৃত ঋণের হার গেল বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছিল। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে আরও মনোযোগী হতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রমাগত নির্দেশনা প্রদান এবং একইসঙ্গে সময়োপযোগী নীতি সমর্থনের কারণে শ্রেণীকৃত ঋণের হার এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে বলে ধারণা করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকেও বেশ খানিকটা চাপ নিতে হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে সর্বক্ষণ গুণমানের ঋণ দেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর তাগিদ দিয়ে আসছে। দেয়া ঋণ আদায়েও ব্যাংকগুলোকে নিরন্তর উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে ঋণ আদায়ের হারও বেড়েছে। এছাড়া অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়া বৃহদাঙ্কের ঋণগুলো পুনর্গঠনে একটি নীতিমালা জারি করেছে। এ নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগে সামনের প্রান্তিকে শ্রেণীকৃত ঋণের হার আরও কমে আসবে। ২৯ জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের ভাল গ্রাহকদের কিছুটা সুবিধা দিতে নিয়ম-নীতি সংস্কার করার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে মন্দ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে বরাবরই শক্ত অবস্থান নিতে দ্বিধা করবে না এ বিষয়টিও স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
×