ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষি থেকে শিল্প

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কৃষি থেকে শিল্প

অগ্রগতির সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উপরে উঠছে ক্রমাগত। শিল্প ও সেবা খাতে দ্রুত এগিয়ে গেলেও কৃষি খাতে স্থিতাবস্থাই রয়ে গেছে। কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থেকে দেশ ক্রমশ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে, যা মধ্যম আয়ের অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হওয়ার অন্যতম পথে পরিণত হয়েছে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতি কৃষি থেকে শিল্পের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পরম আশাবাদের দিগন্ত খুলে দিচ্ছে তা। মানুষের আর্থিক বিকাশ নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মোচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কৃষিনির্ভর এই দেশটির অধিকাংশ মানুষই কৃষক এবং কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষ এই খাতের প্রসারে প্রচুর শ্রম ব্যয় করলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। কৃষিকে গুরুত্বহীন করা হলে শিল্প খাতের বিকাশ প্রাগ্রসরতার পথ দেখাবে না। কৃষির যথাযথ বিকাশ সাধনের পাশাপাশি শিল্পের ও সেবা খাতের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলে তা মজবুত অর্থনীতির ভিত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরগতিতে কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থেকে একটি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয় যে, অর্থনীতির ভিত বদলাচ্ছে। এক সময় কৃষিই ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক। এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ছিল প্রায় ৮০ ভাগ শ্রমিক। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিশ্রমিক। বাড়ছে শিল্প ও সেবা শ্রমিক খাত। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল প্রায় ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর সময়কালে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবস্থান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। শিল্প খাত কৃষি ও সেবা খাতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও শিল্প এগিয়ে গেছে দ্রুত। কিন্তু কৃষির পক্ষে তা হয়নি। এতে কৃষিকে যে অবহেলা করা হয়েছে তা অবশ্য সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেন না। যুক্তি দেয়া হচ্ছে, কৃষির বহুমুখীকরণের ওপর পরিকল্পনায় জোর দেয়া হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দেশের অর্থনীতির এক সময়ের মূল নিয়ামক কৃষি খাতকে যদি শিল্পের পাশাপাশি স্থান দেয়া যায় তবে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির ক্ষেত্র আরও ú্রসারিত হবে, জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। তবে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে কৃষি জমির অবাধ ব্যবহার না করার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়নি যদিও তথাপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমান্তরাল চালু থাকাটাই ছিল সঙ্গত। তাতে পরস্পর সম্পূরক হিসেবে অগ্রগতির সোপানে চড়তে পারত। অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করেছে প্রথমে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে। পরবর্তীকালে তারা শিল্পের দিকে যাত্রা করে। বিশেষত বস্ত্র খাতে। বাংলাদেশ সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের শ্রম ছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদ বলে বেশি কিছুই নেই। শিল্প খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে গিয়ে কৃষি খাত পেছনে পড়ে থাকা সঙ্গত হবে না। কৃষি খাতের জমিকে শিল্প খাতে স্থানান্তকরণ দরকারী হলেও তা সর্বক্ষেত্রে সম্ভব নয়। অকৃষি খাতের জমিকে শিল্প খাতে বরাদ্দ করা যেতে পারে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দেশ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে, যা যুগান্তকারী সাফল্যের দিকে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। বদলে যাওয়া অর্থনীতির পথ ধরে উন্নত দেশের দিকে গতিপথ এগিয়ে নিতে চাইছে। এক্ষেত্রে শিল্প, কৃষি, সেবা খাত একসঙ্গে এগিয়ে গেলে দেশ লাভবান হতে পারে। সেটাই প্রত্যাশিত।
×