ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিতে লোক পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ॥ মাসে যাবে দশ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদিতে লোক পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ॥ মাসে যাবে দশ হাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সফররত সৌদি প্রতিনিধিদল সোমবার সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ১৯ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিমাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে ১০ হাজার করে কর্মী নিয়োগ করবে। মাসিক বেতন ১২শ’-১৫শ’ রিয়াল ধরা হয়েছে। তবে এই কর্মী নিয়োগ হবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সৌদি আরবে কী পরিমাণ কর্মী নিয়োগ হবে তা এখনই নির্ধারণ হয়নি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহকর্মী নেয়ার বিষয়টি সফররত সৌদি প্রতিনিধিদল নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, প্রতিমাসে ১০ হাজার কর্মী নেবে। সেই হিসাবে বছরে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। শুধু গৃহকর্মীই দেশটিতে কাজের সুযোগ পাবেন না। গৃহকর্মীর মধ্যে ১০টি খাত রয়েছে। এর মধ্যে ড্রাইভার, ম্যানেজারের মতো পদও আছে। এর বাইরে সৌদি আরবে ছয়টি মেগাসিটি হচ্ছে। সেখানেও তারা কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী কর্মীদের বেতন ১২শ’-১৫শ’ রিয়ালের মধ্যে হবে বলে মন্ত্রী বলেন। অন্য সেক্টরে কর্মী নিয়োগ হলে বেতনের পরিমাণ বাড়তে পারে। দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। কোন্ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করবে তা চূড়ান্ত করতে গত রবিবার ১৯ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তারা সোমবার কর্মব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর দিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। ব্যয় কমিয়ে কর্মী নিয়োগের শর্তে প্রতিমাসে ১০ হাজার করে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে কর্মী যাবে সৌদি আরবে। তবে বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারকরা শতভাগ লোক পাঠাবেন। তবে এখানে কোন প্রকার মধ্যস্বত্বভোগী থাকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশনকৃত কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কোন দালালের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারকদের বিরুদ্ধে সৌদিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ তার আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরব যেতে একজন কর্মীর ১৫-২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। এই খরচের বাইরে কোন খরচ কেউ নিতে পারবেন না। সোমবার সকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিনিধিদল নেতা সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া কী হবে তা চূড়ান্ত করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফলে সৌদি শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর এক লাখ ২০ হাজার কর্মী বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ করবে এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশকে দেশটি সোর্স কান্ট্রি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। যখনই দেশটিতে কর্মী লাগবে তখনই আনুপাতিক হারে বাংলাদেশ থেকেও তারা কর্মী নিয়োগ করবে। বাজারটি এখন একটি স্থায়ী বাজারে পরিণত হবে। সৌদি ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিনব্যাপী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে করণীয় ঠিক করেছে। সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী ড. আহমেদ আল ফাহাইদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ এটা কোন নতুন বিষয় নয়। বর্তমানে তার দেশে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ কর্মী কাজ করছেন। মাঝখানে কিছু সমস্যার কারণে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছিল। এখন সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে সৌদি আরব কর্মী নিয়োগ করে থাকে। এখন থেকে বাংলাদেশও সেই তালিকার মধ্যে থাকবে। সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশের মধ্যে। সৌদি নতুন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার অনুমতি দেয়ার এক সপ্তাহ পরই সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসেছে। সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সইও করা হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিভাবে জনশক্তি নেয়া যায় তার যথাযথ প্রক্রিয়া তৈরির কাজ সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতি কর্মীর জন্য সৌদি কোম্পানিই খরচ বহন করবে। এটাই প্রথম এত কম খরচে সৌদিতে কর্মী নিয়োগের ইতিহাস। আগে প্রতি কর্মীর কাছ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়া হতো। ফলে সেখানে গিয়ে একজন কর্মী তার খরচই তুলতে পারতেন না। ওই কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অবৈধভাবে দেশটিতে থেকে যেত। এতে ওই কর্মী সব সময় পুলিশের ভয় নিয়ে গোপনে কাজ করতেন। এবার কম টাকায় সেখানে গিয়ে চাকরির মেয়াদের মধ্যেই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আসলে সৌদি শ্রমবাজারটি কখনই বন্ধ ছিল না। তবে তারা নানা কারণে কর্মী নিয়োগে সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিল। এবার বাজারটি সব ধরনের কাজের জন্যই খুলে দেবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি শ্রমবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। নানা কারণে ২০০৮ সালে এই বাজারটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ ছয় বছর পর বাজারটি আবার খুলে গেছে। এখন তারা আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। আমরা আশা করছি, সৌদি আরব কর্মী নিয়োগ শুরু করলেই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। মালয়েশিয়ায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় কর্মী নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সরকারী ব্যবস্থাপনার কারণে খুব বেশি কর্মী সেখানে যেতে পারেননি। এমন অবস্থায় সৌদি আরবেও সরকারী ব্যবস্থাপনায় লোক যাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারী এজেন্সিগুলোর নানারকম প্রতারণার কারণেই মালয়েশিয়ায় সরকারীভাবে লোক পাঠাতে হয়েছিল আর জনশক্তি রফতানিকারকরা যে লোক পাঠায়, সেটিও তো সরকারী প্রক্রিয়ায় হয়। সরকারী প্রক্রিয়া ছাড়া তো একটা লোকও বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে পারেন না। এবারও তাই হবে। সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে পুরোটাই বেসরকারীভাবে হবে। সরকার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কিন্তু কর্মী পাঠাবে বেসরকারী এজেন্সি। তবে সরকার সব সময় বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখবে।
×