ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল নিষিদ্ধে আইন করতে জনমত গড়বে এফবিসিসিআই

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হরতাল নিষিদ্ধে আইন করতে জনমত গড়বে এফবিসিসিআই

এম শাহজাহান ॥ আইন করে হরতাল-অবরোধ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি মনে করছে, জনমত সৃষ্টি হলেই সরকার এ ধরনের ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচী নিষিদ্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এই শীর্ষ সংগঠন অনশন, মানববন্ধন, সাদা পতাকা মিছিলসহ রাজপথে আরও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী নিয়ে আসছে। খুব তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করবে এফবিসিসিআই। রবিবারের কর্মসূচীতে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যাপক সাড়া পড়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে সংগঠনটির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংস আন্দোলন ও নাশকতা বন্ধে ব্যবসায়ীদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাবে এফবিসিসিআই। দল-মত নির্বিশেষে দেশের সাড়ে ৩ কোটি ব্যবসায়ীকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে ইতোমধ্যে জেলা চেম্বারগুলোকে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া ৩৭৯টি এ্যাসোসিয়েশনকেও হরতাল-অবরোধ বন্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কেবল জনমত সৃষ্টি হলেই আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধে সরকার এগিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এফবিসিসিআইয়ের আন্দোলন বন্ধ হয়নি। আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধে আরও বড় ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। আমরা আইন করার পক্ষে আরও জনমত সৃষ্টি করতে চাই। এ জন্য রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ১৫ মিনিটের জন্য রাজপথে নেমে এসেছেন। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার কোন খবর পাওয়া যায়নি। এতেই প্রমাণ হয়েছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিয়েও দাবি আদায়ের পথ উন্মুক্ত করা যায়। আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি সরকার পূরণ করবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, দেশের সাড়ে ৩ কোটি ব্যবসায়ী এফবিসিআইয়ের সঙ্গে রয়েছেন। এদিকে, এফবিসিসিআই বলছে, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে আর্থিক খাতগুলোতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, পেট্রোলবোমায় পুড়ে মরছে সাধারণ মানুষ। এতে চারদিকে আতঙ্ক বাড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে এই আতঙ্ক দূর করা প্রয়োজন। এফবিসিসিআই বলছে, এটা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, নাশকতা। এই কর্মসূচীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও রুখে দাঁড়িয়েছে। আগে হরতালে দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমল বন্ধ রাখা হলেও এখন খোলা রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার দাবি নতুন নয়। কিন্তু এটা নিয়ে কখনও জনমত সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এফবিসিসিআই এখন যেভাবে কর্মসূচী দিচ্ছে তাতে এক ধরনের জনমত সৃষ্টি হচ্ছে। সর্বশেষ দেশব্যাপী যে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হলো তা অনেকাংশে সফল হয়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইন করার কথা বলছে। তিনি বলেন, এটা হওয়াও প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতির স্বার্থে হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইন করা হয়েছে। ওই হিসেবে এটা বাংলাদেশেও হতে পারে। এদিকে, হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইন করতে সম্প্রতিও এক সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও জনমত সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক যে কোন ধরনের কর্মকাণ্ড অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচী দেশের অর্থনীতির জন্য নারকীয়। ব্যবসায়ীরা হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন এবং এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের কথা বলছেন। এটি একটি ভাল প্রস্তাব। চাইলে তারা আদালতে যেতে পারেন। এটা একটা চাপ হবে। তাঁরা এগিয়ে এলে আমি তাঁদের সমর্থন দেব।
×