ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীতে যাচ্ছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীতে যাচ্ছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার কঠোর কর্মসূচীর দিকে যাচ্ছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীগণ। ব্যবসার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশের দাবিতে অনশন কর্মসূচী পালন করতে যাচ্ছেন তারা। আগামী শনিবার সকালে রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনের সামনে এ কর্মসূচী শুরু করতে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। হরতাল আর অবরোধের কবলে পড়ে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ২৩ সদস্য কারখানার ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার ২৯৮ ডলার, যা দেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল, মূল্যছাড়, উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো, জাহাজীকরণে বিলম্ব ও নাশকতার কবলে পড়ে এসব ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, তারা ব্যবসার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান। এ জন্য নানা কর্মসূচী পালন করেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার সংগঠনটির অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচী কি হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকখাতের সঙ্গে জড়িত সবার ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩টি কারখানা তথ্য জমা দেয়। তবে, গণমাধ্যমে এসব কারখানার নাম প্রকাশ হওয়ায় তারা ব্যাংক ঋণসহ নানা জটিলতায় পড়ছে। তাই এখন কারখানা মালিকরা তেমন তথ্য দিচ্ছে না বলেও জানান তিনি। এদিকে সংগঠনটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী শনিবার সকাল ১১টায় বিজিএমইএ ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচী শুরু হবে। এজন্য ব্যানার ও মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। বিজিএমইএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলমান হরতাল-অবরোধে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ৯২ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে মূল্যছাড় দেয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৩ ডলার। উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাড়তি খরচ পড়েছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৫ ডলার। নাশকতায় ক্ষয়ক্ষতি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৩ ডলার। পণ্য জাহাজীকরণে বিলম্ব বা আটকে আছে ৪৪ লাখ ৯২ হাজার ২২১ ডলারের পণ্য। সব মিলিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধে তৈরি পোশাক খাতের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার ২৯৮ ডলার, যা দেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পোশাক শিল্প মালিকদের মূল্যছাড় দিতে হয়েছিল নয় হাজার কোটি টাকার পণ্যে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য বেশি অর্থ দিয়ে উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি টানা অবরোধে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চেয়ে সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এরপর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য পাঠায় ২৩টি কারখানা। এর আগে বিএনপি-জামায়াতের চলমান অবরোধ আর হরতালের সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে তৈরি পোশাক খাতের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। সেদিন তারা প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে স্মারকলিপি দেয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে পোশাক শিল্পের নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, পোশাক শিল্পের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা নেয়া, শিল্প ও জানমালের নিরাপত্তা দান এবং যারা অর্থনীতি ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেয়া স্মারকলিপিতে পোশাক শিল্পের নেতারা বৃহত্তর স্বার্থে পোশাক শিল্পকে সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান। অতীতে পোশাক শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার কথাও তাঁকে স্মরণ করিয়ে বলেন, একইভাবে এবারও পোশাক শিল্প, সেই সঙ্গে পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট সকল ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড শিল্পের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে পণ্যবাহী ট্রাক/কাভার্ড ভ্যানকে হরতাল/অবরোধসহ সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ করেন তারা। এর পর গত রবিবার রাস্তায় নামে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা জাতীয় পতাকা হাতে ১৫ মিনিট রাজপথে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাস্তায় নামে জাতীয় পতাকা হাতে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।
×