ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে দলের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট, টুর্নামেন্ট সেরা জামালের স্বপ্ন সুদূরপ্রসারী

অগ্রযাত্রা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অগ্রযাত্রা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা ফুটবল পরাশক্তিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি টুর্নামেন্ট খেলে ফাইনালে উঠেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট সমাপ্ত করেছে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়ে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মোক্ষম সুযোগ থাকলেও দুর্ভাগ্যবশত শেষ মুহূর্তের গোলে সেটা হয়নি। তবে দারুণ এক প্রাপ্তি আছে দলের ।টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। তিনি মনে করেন প্রত্যাশার চেয়েও ভাল খেলেছে বাংলাদেশ দল এবং সে জন্য বিদেশী দলগুলোও প্রশংসা করেছে বাংলাদেশের ফুটবলের। জামাল মনে করেন নির্ভরযোগ্য ও অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার জাহিদুল ইসলাম জাহিদ খেলতে না পারার অভাবটাই দলের আক্রমন-রক্ষন, দু’দিকেই কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিল। পুরো আসরেই একমাত্র অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে স্ট্রাইকিংয়ে। বার বার প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গে আঘাত হেনেও গোল পায়নি বাংলাদেশ সুযোগসন্ধানী বা দক্ষ একজন গোলদাতার অভাবে। এমনটাই মনে করেন জামাল। এবার দেশের ঘরোয়া আসরেও খেলবেন এতদিন ডেনমার্কে খেলা এ মিডফিল্ডার। আর পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠতে চান এশিয়ার অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। এ আসরে বাংলাদেশ যে সফলতা দেখিয়েছে এখন সেই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ এমনটাই মনে করেন জামাল। ক্রিকেটের প্রসার, ক্রিকেটের উন্নতি ও সফলতার কারণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। এক সময় যে দেশের ঘরোয়া ফুটবল আসর দেখতে স্টেডিয়ামে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন দেশের মানুষ, তিল ধারণের জায়গা থাকতো না গ্যালারিতে সেই দেশের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন ফুটবলবিমুখ। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের প্রশংসা করতেই হয়। তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ আবার দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি আসর আয়োজন করে দেশের তরুণদের মধ্যে ফুটবলপ্রীতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। ঢাকার বাইরে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করার পরই যেন ফুটবল উন্মাদনার নবজন্ম হয়েছে। তখন থেকেই শুরু, স্টেডিয়ামমুখী মানুষের জনস্রোত। এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নতুন করে শুরুর মাধ্যমে যেন জোয়ারটাও ফিরে এলো। এবার সিলেট জেলা স্টেডিয়াম এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মানুষের ঢল নেমেছিল। আর সে জন্যই যেন দেশের খেলোয়াড়রা বাড়তি এক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, স্পৃহা জেগে উঠেছে দারুণ কিছু করার। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ দল ছিল ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অংশগ্রহণকারী বাকি পাঁচ দলের মধ্যে সবার নিচে। তাই মূল লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল খেলা। সে লক্ষ্যটা অর্জন করার পর আবার ফাইনালেও খেলেছে দল। ফাইনালে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও মনোবল ভাঙ্গেনি দলের। সমতা আনে টাইগাররা। তবে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ৩-২ ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়। ফলাফল বিবেচনায় হেরে গেলেও সবার মন জয় করতে পেরেছে বাংলাদেশের ফুটবলাররা। এখন সাফল্যের এ ধারাটা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ দেশের ফুটবলারদের জন্য। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ সুযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এ কারণে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েও খুশি হতে পারছেন না জামাল। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের সেরা আনন্দের উপলক্ষ হতে পারত আজ। কিন্তু আমরা হেরে গেলাম। চ্যাম্পিয়ন হলেই খুশি হতাম।’ জাহিদের অভাবটা পূরণ হয়নি। শুরুতেই পেশিতে টান পড়ায় মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। তিনি থাকলে মাঝমাঠ আরও নিয়ন্ত্রণে থাকত বাংলাদেশের। এ বিষয়ে জামাল বলেন, ‘জাহিদ উঠে গেলেও কমল ভাল খেলেছেন। কিন্তু জাহিদ তো জাহিদই। ও আমাদের দলের অন্যতম বড় ভরসা। ওকে হারানো আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।’ সর্বোপরি বাংলাদেশের ফুটবল যেভাবে এগিয়েছে এবং এ আসরে যেমন খেলেছে দল সেটাতে দারুণ সন্তুষ্ট তিনি। জামাল এবার চান নিজেকে এশিয়ার সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। শেষ জামাল ধানম-ি ক্লাবে খেলেছেন সেটা চালিয়ে যাবেন। গোলদাতার অভাবটাই সবচেয়ে বড় ঘাটতি এখন দলের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লীগে সাধারণত স্ট্রাইকার হিসেবে ক্লাবগুলো বিদেশীদের ব্যবহার করে। এ কারণে ভাল মানের স্ট্রাইকার তৈরি হচ্ছেনা। না খেললে গোল করার দক্ষতা বাড়বে কেমন করে? এ কারণেই আমরা এ টুর্নামেন্টে অনেক গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারিনি।’
×