ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে শিল্প

রহিম শেখ ॥ স্বাধীনতার ৪৩ বছরে দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে চক্রবৃদ্ধি হারে। এই সময়ে শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়লেও প্রকৃত উদ্যোক্তার সংখ্যা কত, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই কোথাও। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাই বা কত তাও অস্পষ্ট। দেশে মোট ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার সংখ্যা কত তা জানে না কোন ব্যবসায়ী সংগঠন। এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে সব ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছেই রয়েছে নিজ নিজ সদস্যদের তালিকা। এর বাইরে কখনই কোন পরিসংখ্যান কিংবা কোন তথ্য ভা-ারে যোগ হয়নি প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তার সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে সব মিলিয়ে ছোট-বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তার সংখ্যা ১ কোটির বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে ৫০ লাখ শিল্প ইউনিট রয়েছে। সংখ্যাটি প্রাথমিকভাবে জানা গেলেও পরিসংখ্যান ব্যুরো পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করবে চলতি বছরের জুনে। জানা গেছে, জিডিপিতে গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ অবদান রাখছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাত। মোট শিল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশই এসএমই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা এসএমই উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। এরমধ্যে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছরে শহরের তুলনায় গ্রামেই নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট ৯০ শতাংশ শিল্প ইউনিট এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে শিল্প কারখানায় নিয়োজিত মোট শ্রমিকের ৮৭ শতাংশ এবং মোট সংযোজিত পণ্যের ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা এসএমই উদ্যেক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নয়, বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্রসারে এ খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাতের উদ্যোক্তা কিংবা তাদের প্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোথাও। ২০০৯ সালে বিবিএস পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে এসএমই শিল্পের সংখ্যা ৯৩ হাজার। ২০১৩ সালে পরিচালিত অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপাদনশীল খাতে এসএমই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১২৯। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পের অবদান ২৮ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ ইহসানুল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে ৬০ লাখেরও বেশি হবে উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। খুব র্অপ সময়েই এ খাতের উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটা তথ্য ভা-ার তৈরি করা হবে বলে তিনি জানান। রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত পোশাক শিল্পের চিত্রটাও অনেকটা অস্পষ্ট। মোট আয়ের ৭৮ ভাগ আসলেও সারাদেশে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের গরমিল। এছাড়া ওষুধ শিল্প, হাল্কা প্রকৌশল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও ব্যবস্থা (পোল্ট্রি ও ডেইরি), কৃষি খামার, ট্যানারি, মৎস্য চাষ, হাল্কা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স, সিমেন্ট, ইলেকট্রিক কেবল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনাময় শিল্প রয়েছেÑ যার মাধ্যমে দেশে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। কিন্তু এসব উৎপাদনশীল খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা-পরিসংখ্যান কোথাও নেই। দেশের উৎপাদনশীল খাতে জড়িত প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তার সংখ্যা জানতে সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে কোন সংগঠন কখনই কোন গবেষণা করেনি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে-তাঁতশিল্প, হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের শিল্প, ঝিনুক শিল্প, পাট শিল্প, খাদ্য ও খাদ্যজাত দ্রব্যাদি, বস্ত্রশিল্প, সিরামিক শিল্প, রবার শিল্প, চামড়া বা ট্যানারি শিল্পের প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তার সংখ্যার মধ্যে রয়েছে গরমিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কুটির শিল্প কর্পোরেশনের তৈরি করা ২০১১ সালের এক জরিপ দেখা যায় যে, দেশে মোট কুটির শিল্পের সংখ্যা ৮ লাখ ৩০ হাজার ৩০৬টি। ক্ষুদ্রশিল্পের সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬০টি দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক শুমারির ২০১৩‘র প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, দেশে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৪টি। এক দশকে বৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮ শতাংশ। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে দেশে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৮টি। ২০১৩ সালে স্থায়ী ইউনিট বেড়ে হয়েছে ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬টি। ২০০৩ সালে তা ছিল ২৯ লাখ ৯১ হাজার ২৩৮টি। ১৯৮৬ সালে দেশে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৯টি। অন্যদিকে দেশে মোট শিল্প কারখানা রয়েছে ৪২ হাজার ৫৯২টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬ হাজার ৯৮৪টি। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৩১টি। যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই শিল্প কারখানাগুলো পুরোপুরি ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। সম্পূর্ণ সরকারী মালিকানায় দেশে মাত্র ১০৩টি কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশী ২৬৩টি, দেশী-বিদেশী যৌথ বিনিয়োগে ২৬৩টি, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ‘সার্ভে অব বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ-২০১২’ শীর্ষক এক সমীক্ষাটি দেশের ৮ হাজার ৪০০ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত হয়। সমীক্ষায় বলা হয়, বস্ত্র খাতে ১৭ হাজার ৯৬৭টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে ৬ হাজার ৯৮৪টি। আর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে ৮ হাজার ৪৪১টি। পোশাক শিল্প ॥ শিল্প বলতে আমরা অনেকেই শুধু পোশাক শিল্পের কথা বলি। ২০০০ সালের ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্জিত হয়েছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ শ্রমিক জড়িত। পোশাক শিল্প খাতকে কেন্দ্র করে দেশে বিভিন্ন ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প খাত বিশেষ করে সুতা, বোতাম, জিপার, ডাইং, ফিনিশিং, পলিব্যাগসহ বিভিন্ন এক্সেসরিজ শিল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু পোশাক শিল্প খাতে ছোট-বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তার সংখ্যা কত যেন অনেকটাই অস্পষ্ট। সম্প্রতি প্রায় দেড় হাজার সদস্যপদ বাতিল করায় বিজিএমইএ’র সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৪ হাজার ২২২। পোশাক শিল্পের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ’র সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬০০। মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ১৩৭০। তিন সংগঠনের ৯ হাজার তালিকাভুক্ত সদস্য হলেও এর বাইরে রয়েছে আরও প্রায় ৫ হাজার সদস্য। চামড়া শিল্প ॥ তৈরি পোশাক শিল্পের মতো বাংলাদেশও চামড়া খাত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে প্রায় ৩০০ কারখানা। চামড়া খাতের তিন সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার এ্যান্ড লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোরটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা সাত শতাধিক। সবমিলিয়ে এ খাতে ১ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন। প্লাস্টিক শিল্প ॥ বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ৫২টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০টি ছোট, মাঝারি ১ হাজার ৫০০টি ও বড় মাপের প্রতিষ্ঠান আছে ৫২টি। এগুলোর মধ্যে শতভাগ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০০টি প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান, ২০টি সরাসরি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও উভয় ধরনের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০টি। এ খাতে নিয়োজিত জনবলের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ প্রায় ৬০টি দেশে ২৬৮ কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ॥ বাংলাদেশ পিইটি ফ্লেইকস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএফএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে পিইটি প্লাস্টিক বর্জ্য ও বোতল উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যা ৮শ’র বেশি। ২০১০ সালে ৩০ হাজার টন পিইটি প্লস্টিক বর্জ্য রফতানি হয়েছিল। ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয় ৪৫ হাজার টন। বর্তমানে প্রতিমাসে সাড়ে ৪ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য চীনে রফতানি হচ্ছে। ওষুধ শিল্প ॥ বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্বের ৯৭টি দেশে বাংলাদেশের প্রস্তুতকৃত ওষুধ রফতানি হয়। স্বাধীনতার পর শিল্প খাতে জিডিপির অবদান ছিল মাত্র ৯ ভাগ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ ভাগে। আবাসন ॥ বাংলাদেশের আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের অন্তর্ভুক্ত সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২২০। এর বাইরে সবমিলিয়ে দেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর সংখ্যা এখন প্রায় ২ হাজার ৫শ’র মতো। আবাসন শিল্পের সঙ্গে রড, সিমেন্ট, কেবলস ও ইলেকট্রিক ওয়্যার, পেইন্টস, টাইলস, সেনিটারি, ডোর ও উইন্ডো, এ্যালুমিনিয়াম, গ্লাস ফেব্রিকেটর্স, ইটসহ প্রায় ৪শ’ শিল্প জড়িত। সব মিলিয়ে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে বলে জানা গেছে। আসবাব শিল্প ॥ বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় ৫০ হাজার আসবাব তৈরির কারখানা রয়েছে। শুধু ঢাকায়ই রয়েছে উন্নতমানের আসবাব তৈরির অনেক কারখানা। বর্তমানে এসব কারখানায় ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত। সারাদেশে আসবাব শিল্পে জড়িত রয়েছে প্রায় ২০ লাখ জনশক্তি। সিরামিক শিল্প ॥ বর্তমানে সিরামিক শিল্পের বিনিয়োগ রয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ কোটি টাকার। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ লাখ লোকের। বর্তমানে সিরামিক শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ দুই হাজার ৫শ’ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে ৩৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য প্রস্তুতকারী সমিতি (বিসিডব্লিউএমএ) সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৫৪টি প্রতিষ্ঠান তৈজসপত্র, টাইলস ও সেনিটারি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করছে। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৩২টি। সদস্যছাড়া এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৮০। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে বাংলাদেশে তৈরি সিরামিক রফতানি হচ্ছে। হাল্কা প্রকৌশল শিল্প ॥ বর্তমানে সারাদেশে ৪০ হাজার হাল্কা প্রকৌশল যন্ত্রপাতির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা প্রায় ১৪ লাখ লোক কাজ করেন। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে নিবন্ধিত রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৩ হাজার সহযোগী শিল্পে আরও ৪ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। শিক্ষা প্রশিক্ষণবিহীন ও অপরিকল্পিতভাবে প্রায় ৫ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায়। পাট শিল্প ॥ স্বাধীনতার পরপর দেশে জুট মিলের সংখ্যা ছিল ৭৭টি। ১৯৭২ সাল থেকে সবই বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে ৩৮টি প্রতিষ্ঠান পরে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। বেসরকারী খাতে পর্যায়ক্রমে আরও ১০০-এর মতো জুট মিল গড়ে তোলা হয়, যেগুলো বিজেএমএর। এছাড়া বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) আওতায় রয়েছে আরও ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। কাগজ শিল্প ॥ বর্তমানে বাংলাদেশে ৭৩টি কাগজকল রয়েছে। বাংলাদেশের বার্ষিক চাহিদা হচ্ছে ৭ লাখ মেট্রিক টনের মতো। সেখানে কাগজ উৎপাদন হচ্ছে ১২ লাখ মেট্রিক টন। টিস্যু থেকে পার্টিকেল বোর্ডসহ সব ধরনের কাগজজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। এই সেক্টরে মোট বিনিয়োগ রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৩০। চিনি শিল্প ॥ দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের সংখ্যা ১৫টি। বেসরকারী খাতে স্থাপিত ৬টি সুগার রিফাইনারির মধ্যে ৫টি চালু আছে। তথ্যপ্রযুক্তি ॥ দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বছরে এ খাত থেকে আয় আসছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। নিবন্ধিত আইসিটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজারেরও বেশি। জাহাজ শিল্প ॥ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, খুলনার রূপসা, দাউদকান্দির মেঘনা নদী এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ছোট-বড় শিপইয়ার্ড। এর মধ্যে কর্ণফুলী, মেঘনা ও রূপসার নাব্য বেশি হওয়ায় এই নদীগুলোর পারে নির্মাণ হয়েছে বৃহৎ আয়তনের শিপইয়ার্ড। এ পর্যন্ত ১৩১টি জাহাজ বানিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান ও জার্মানিতে সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি করেছে ১৪টি। এছাড়া জাহাজ ভাঙা শিল্প বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার অন্তর্গত ভাটিয়ারী থেকে বারআওলিয়া পর্যন্ত উপকূল অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। এই এলাকায় ১২৫টির বেশি ছোট-বড় জাহাজ ভাঙ্গা কারখানা অবস্থিত। এ শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। পর্যটন শিল্প ॥ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ২ দশমিক ১০ শতাংশ।
×