ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমা তার হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমা তার হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে

ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমাদের পেছনের দিকে তাকাতে হয় এবং সামনের দিকে তাকাতে হয়। আমরা একটি পরাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিজেদের সাহসে ইংরেজীর পাশে বাংলাকে স্থাপন করতে পেরেছি। তার জন্য নিজেদের সংগঠিত করেছি, বীরের মতো রক্ত দিয়েছি, কৃষকের চালায় কৃষকের সন্তান হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে কলোনির পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রথম পদাঘাত দিয়েছি এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম কুচকাওয়াজ শুরু করেছি। ভাষার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র গঠনের সূচনা যেমন করেছি, তেমনি বিশ্বভাষা ইংরেজীর পাশে (উর্দুর পাশে নয়) নিজেদের ভাষার মর্যাদা স্থাপন করেছি। মাতৃভাষার মাধ্যমে লেখাপড়া শেখা এবং লেখাপড়ার মানমর্যাদা মাতৃভাষা এবং মাতৃভাষার চর্চার জন্য দরকার একটি রাষ্ট্র গঠন। এই বোধ দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষকের দেশ বাংলাদেশে আমরা প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছি। ধান এবং জ্ঞান পরস্পর প্রবিষ্ট : পাকিস্তানের কলোনিকালে আমাদের প্রথম লড়াই ধানের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। দ্বিতীয় লড়াই ভাষার ওপর, জ্ঞানের লড়াই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই দুই লড়াই এখনও আমাদের অব্যাহত। এখনও আমরা ধান এবং জ্ঞানের লড়াই পরস্পর প্রবিষ্ট করে রেখেছি বুকের মধ্যে। আমরা ধানের উৎপাদন বাড়াতে চাই এবং জ্ঞানের উৎপাদন বাড়াতে চাই। সামনের দিকে তাকালে, বর্তমান মুহূর্তে, আমরা বিভ্রান্ত। বিশ্বায়নের যুগে বাংলা ভাষার কিংবা মাতৃভাষার আদৌ দরকার আছে কিÑ এই প্রশ্নের জবাব আমরা কলকারখানা পুঁজি, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে খুঁজে বেড়াচ্ছি। ভাষা এখন পুঁজির সঙ্গে যুক্ত এবং প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত মাতৃভাষা টিকতে পারছে না, যেমন কলকারখানা টিকতে পারছে না। আমরা বিশ্বের বাজারে আমাদের সন্ততিদের পাঠিয়ে দিচ্ছি এবং বড় পুঁজি গিলে খাচ্ছে হররোজ ছোট পুঁজিকে। অন্যদিক থেকে সমস্যাটির চারপাশে ঘোরাফেরা দরকার। একজন ব্যক্তি, কৃষক হন কিংবা শিক্ষার্থী, তাতে কি তার সিদ্ধির দিক থেকে বিচার করব? একজন কৃষককে বিচার করব কি তার উৎপাদনের দিক থেকে। একজন শিক্ষার্থীকে বিচার করব কি তার জ্ঞানের দিক থেকে। এই বিচার নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির ওই ক্ষেত্রে (ধানের উৎপাদন কিংবা জ্ঞানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে) কতটুকু স্বাধীনতা আছে। এই বিচার আমাদের নিয়ে যাবে অধিকার, লিবার্টি এবং প্রকৃত সুযোগ-সুবিধার দিকে। যদি দেখা যায়, ওই কৃষকের উৎপাদনের ওপর অধিকার উৎপাদনের বিপণনের ওপর, লিবার্টি এবং উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ-সুবিধা অন্য কিছু, অন্য সংস্থার ওপর নির্ভরশীল, তাহলে বলতেই হবে ওই কৃষকের অধিকার, লিবার্টি এবং সুযোগ-সুবিধা উৎপাদনের দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে হ্রস্ব। এ কথা জ্ঞানের ওপর অধিকারের দিক থেকে একজন শিক্ষার্থীর জন্য সত্য। বাংলাদেশের মতো দেশে, সমাজ ব্যবস্থায় ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এসব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত নয় এবং সম্ভব নয়। এসব প্রসঙ্গের নিষ্পত্তি না হওয়ার দরুন ধানের উৎপাদন এবং জ্ঞানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে। দুটি ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে সমস্যার দিকে অগ্রসর হওয়া জরুরী। প্রথমটি হচ্ছে ওই ব্যক্তিটির, কৃষকটির কিংবা শিক্ষার্থীটির, ধানের উৎপাদন এবং জ্ঞানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাস্তবিক সিদ্ধি কী এবং কতটুক; দ্বিতীয়টি হচ্ছে ওই ব্যক্তিটির কতটুকু ফ্রিডম আছে ওই সিদ্ধি অর্জনের। ধানের উৎপাদন না বাড়লে কি জ্ঞানের উৎপাদন বাড়বে? জ্ঞানের উৎপাদন না বাড়লে কি ধানের উৎপাদন বাড়বে? রাষ্ট্র যদি জনসমষ্টিকে কিংবা কৃষক জনসমষ্টিকে গরিব করে রাখে, তাহলে জ্ঞানও গরিব হয়ে থাকবে। গরিব জ্ঞান দিয়ে গরিব দেশ উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? অন্যদিকে গরিব দেশের ধনী সম্প্রদায় (রাজনীতির দিক থেকে জামায়াত এবং বিএনপি এবং তাদের নেতা খালেদা জিয়া) তাদের সন্তান-সন্ততিদের উন্নত দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে জমকালো জ্ঞান আহরণ এবং ভালভাবে থাকবার জন্য। খালেদা জিয়ারা আমাদের সেবাদাস করতে চাচ্ছে। সেজন্য কি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, মানুষ হত্যা, পুরুষ-নারী-শিশু হত্যা? এই হত্যার বিরুদ্ধে, এই মানুষ বিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, বজ্র থেকে আওয়াজ কেড়ে নিয়ে বলতে হবে: নিপাত যাক খালেদা জিয়াদের রাজনীতি, নিপাত যাক জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি, নিপাত যাক খালেদা জিয়া, নিপাত যাক খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমা খালেদা জিয়ার হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে! এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। লেখক : কথা সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ
×