ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসের পরিবর্ধিত সংস্করণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাসের পরিবর্ধিত সংস্করণ

সাত জানুয়ারি প্যারিসের শার্লি এবদো পত্রিকায় সন্ত্রাসী হামলার ছ’মাস আগে ‘টাইম ম্যাগাজিন’ তাদের প্রচ্ছদ শিরোনাম করেছিল ‘দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর।’ এতে অশিন ভিরাথু নামে মিয়ানমারের এক চরমপন্থী বৌদ্ধ ধর্মগুরুকে তুলে ধরেছিল তারা। তার আগে শ্রীলঙ্কার চরমপন্থী বৌদ্ধ গ্রুপ বোড়ুবালা সেনার (ইধফঁ নধষধ ংবহধ) নেতা গালাগোদাত্থে নানাসারা (এধষধমড়ফধঃযঃযব এহধহধংৎধ) এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘বৌদ্ধদের আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’ অশিন ভিরাথু ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়, নানাসারা ভারতীয় ডানপন্থী হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘হিন্দু বৌদ্ধ শান্তি এলাকা’ গঠনে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস’ ষোলো অক্টোবর দু’হাজার চৌদ্দ সংখ্যার সম্পাদকীয় কলামে লিখেছে, ‘দালাইলামা মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মীয় চরমপন্থী গ্রুপগুলোর প্রতি মুসলমান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করার আহ্বান জানান। এ ধরনের উস্কানির ফলে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। জুলাই মাসে দালাইলামা তার ঊনআশিতম জন্মদিনে এ আহ্বান করেছিলেন, কিন্তু এতে তারা সাড়া না দিয়ে সাধারণ জোট গঠনের ঘোষণা দেন।’ বোঝা যাচ্ছে ধর্ম নিয়ে কলকাঠি নাড়ার পুরনো কৌশলের পাশাপাশি এখন নতুন চাল সংযোজন হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে ধর্ম সব সময়ই প্রিয়। সমাজতন্ত্রবিহীন দুনিয়ায় এখন যদিও প্রতিপক্ষ কেউ নেই। এখন যা হচ্ছে তা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও তা ধরে রাখার কৌশলের খেলা। যুদ্ধ অবস্থার টান টান উত্তেজনা বজায় রাখতে হয় অস্ত্র ব্যবসার মুনাফাকে আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলার জন্য। নিজের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে নিরন্তর ব্যয় বাড়িয়ে চলে। আর বিভিন্ন দেশে সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চড়া দামে অস্ত্র বিক্রি করে। এতেও মুনাফার ক্ষিধে মেটে না। তাই এখন দুনিয়াজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে অস্ত্রবাণিজ্য চাঙ্গা রাখছে। এটা এখন সবাই জানেন ইসলামী জঙ্গীবাদের নামে অস্ত্রবাণিজ্যের প্রথম সফল প্রকল্পের নাম ‘আল কায়দা।’ ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে সংগঠনটি জলে-তেলে নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদার সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতায়। তারপর সব পানি গড়িয়েছে বিশ্ববাসীর সামনেই। হারাবার যাদের তারা সব হারিয়েছে। আর অস্ত্রবাণিজ্যের নেট মুনাফা ঘরে তুলে যুক্তরাষ্ট্র নতুনরূপে রণক্ষেত্রে। বিন লাদেনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আল কায়দারও ভাত নেই। এখন আইএস যুগ। পোষা ভৃত্য সৌদি আরব, কাতার প্রভৃতি দেশের মাধ্যমে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য পাঠিয়ে আইএসকেও যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী করেছে। তার ফলও আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বড় অংশ দখল হয়েছে। সিরিয়ায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তৈরি হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশেও চলছে নতুনরূপে সন্ত্রাসের পরিবর্ধিত সংস্করণের কাজ। পাকিস্তান তো ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের পীঠস্থান হয়েই আছে। আল কায়দা-তালেবানের পর লস্কর-ই তৈয়েবা ও নানান নামের অসংখ্য জঙ্গী গ্রুপ সে দেশের শোভা বর্ধন করছে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আশির দশক থেকে সন্ত্রাসের যে ধারা তৈরি করেছে তার অনুকূল স্রোতে বেড়ে উঠেছে আরও অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রুপ। এদের সম্মিলিত প্রয়াসে দেশ এখন অচল প্রায়। ভারতে জনসংখ্যার শতকরা তেরো ভাগ মুসলমান। এদের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকে। মুম্বাই ও দিল্লীতে সফল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। বর্ধমানে বোমা ফাটাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার কারণ ছিল না। এটা ওই পরিবর্ধিত সংস্কারের কৌশল। কারণ প্রচার মাধ্যম সূত্রে আমরা জেনেছি ওই সন্ত্রাসীদের মূল ঘাঁটি বাংলাদেশ। আইএসসহ অন্যান্য ইসলামী জঙ্গী গ্রুপ দিয়ে মুসলিম বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত। হাতের পাঁচ হিসেবে এখন গড়ে তোলা হচ্ছে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি এলাকা। প্রয়োজনে এই শান্তির দূতেরাই হয়ত অশান্ত হয়ে উঠবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে তা এমনি এমনি নয়। বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশগুলো নিজেদের প্রয়োজনে সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ছে। অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পরিপুষ্ট করছে এবং সবচেয়ে ভয়াবহ হলো এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে সাধারণ মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টার ইন্টার প্রোটেশন এমনভাবে হয় যে, সাধারণ মানুষ এর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে ফেলে। বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে এখন যা চলছে তা ওই বিশ্ব সন্ত্রাসী কর্মসূচীরই অংশ। আপাত ঢিলেঢালা এ কর্মসূচী হয়ত বাংলাদেশের একটি সঙ্কটময় রাজনৈতিক ইমেজ তৈরি করছে। যার ওপর ভর করে অশুভ কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
×