ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদি শ্রমবাজার

বিলম্বে হলেও বাংলাদেশের জন্য এটি একটি আশাজাগানিয়া সংবাদ। দীর্ঘ ছয় বছর পর সৌদি আরবে খুলে গেল দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক কাজ করলেও সৌদি আরবে রয়েছে বিশাল শ্রমবাজার। ২০০৮ সালে সৌদি আরবে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ২৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক সেখানে পৌঁছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দক্ষতা ও সহিষ্ণুতার কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সবচেয়ে বড় সেক্টর বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থ অর্থাৎ রেমিটেন্স। আর এই রেমিটেন্সের বিরাট অংশ আসে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সফররত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট সৌদি আরব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে প্রতিমাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে। কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। নিয়োগকৃত কর্মীরা নামমাত্র খরচে সেখানে যেতে পারবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে কোন রকম পরিবর্তন না করলে বছরে এক লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের সম্পূর্ণ বিষয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে কর্মী বাছাই ও প্রেরণের ক্ষেত্রে শতভাগ ভূমিকা থাকবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান জনশক্তি রফতানিকারদের। বাংলাদেশ ও সৌদি কর্তৃপক্ষ স্বল্প খরচে শ্রমিকদের সৌদি আরব যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শ্রমিকদের যাওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার মধ্যস্বত্বভোগী চক্রকে বরদাশত করা হবে না। খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত মানুষ কষ্টের টাকায় সৌদি আরবে গিয়ে কোন প্রতারক চক্রের হাতে পড়ে যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হবে। শ্রমিকদের অভিযোগকে আমলে নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের তরফ থেকে পরিষ্কারভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা প্রতরণার বিষয় প্রমাণিত হয় তবে তার আর্থিক জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তবে ভিসা কেনাবেচায় জড়িতরা ১৫ বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন। সৌদি আরব বিশ্বের ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। এখন থেকে বাংলাদেশও সেই সোর্স কান্ট্রির খাতায় নাম লেখাল। আশির দশক থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যেতে শুরু করে। সে সময় আদম ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে শ্রমিকদের গুনতে হতো লাখ লাখ টাকা। ভিসা কেনা-বেচা, গলাকাটা পাসপোর্টসহ নানা বিড়ম্বনায়ও পড়তে হতো শ্রমিকদের। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিরীহ শ্রমিকদের কারাবরণও করতে হয়েছে। জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সৌদি আরবে সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর পাশাপাশি যদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারে। শ্রমবাজার মজবুত হলে তা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে। সাধারণ শ্রমিকরা যে বেতন পায় দক্ষ শ্রমিকরা তার চেয়েও ছয়-সাতগুণ বেশি বেতন পায়। সুতরাং এ বিষয়টির প্রতি নজর দিয়ে সামনের দিনে দক্ষ শ্রমিকদের যদি মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে পাঠানো যায় তাহলে দেশ ও দশের মঙ্গল হবে।
×