ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের গণগ্রেফতার এখনও রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের গণগ্রেফতার এখনও রেকর্ড

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে দেশব্যাপী গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল রেকর্ড সংখ্যক। গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করেছে বিএনপি-জামায়াত সরকার। তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতার অভিযান চালানো হয় ২০০৩ সালে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতার অভিযানের ফলে ২০০৩ সালে দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দীর সংখ্যা তখন দাঁড়ায় ৮৫ হাজার, যা সর্বাধিক রেকর্ড। বর্তমানে দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার। ২০০৩ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে যত সংখ্যক গ্রেফতার করা হয়েছে তার চেয়ে ’১৫ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রায় ১৯ হাজার সংখ্যক বন্দী কম গ্রেফতার করেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে ২০০৩ সালে ‘ট্রামকার্ড রাজনীতি’ শুরু করলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তখনকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার অভিযান শুরু করে রেকর্ড সংখ্যক গ্রেফতারের তালিকায় অবস্থান করছে বিএনপি-জামায়াত সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে, ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারকে বিদায় দিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ট্রামকার্ড রাজনীতি শুরু করে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ট্রামকার্ডের রাজনীতিতে তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার মারাত্মক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেফতার, মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। গণগ্রেফতারের ফলে দেশের ৬৮ কারাগারে ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই’ অবস্থায় গাদাগাদি অবস্থায় নির্ঘুম থাকতে হয়েছে বন্দীদের। কারা অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ১৩ কেন্দ্রীয় কারাগার, ৫৫ জেলা কারাগার মিলে আছে ৬৮ কারাগার। সরকারী হিসাব অনুযায়ী দেশের কারগারগুলোতে বন্দীর ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ৯শ’ ৭। বর্তমানে বন্দী আছে প্রায় ৬৬ হাজার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০৩ সালে বন্দী ছিল ৮৫ হাজার। সরকারী হিসাব অনুযায়ী ধারণক্ষমতার যে পরিসংখ্যান রয়েছে তাতে বর্তমানে খাগড়াছড়ি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়েও কম। এই কারাগারে বন্দীর ধারণক্ষমতা রয়েছে ১৭৫। বর্তমানে বন্দী আছে ১৬০। কেবল ঢাকা ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়া দেশের জেলা কারাগারগুলোতে বন্দী রাখার অবস্থা এখনও তেমন খুব একটা খারাপ অবস্থায় নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সঙ্কট বা বিরোধী দলের ওপর সরকারী দলের ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান ছাড়া স্বাভাবিক সময়েই দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি রাখা হয়। তবে রাজনৈতিক সঙ্কট কিংবা সরকারী দলের তরফ থেকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালানো হলে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তখন কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা বেশি, ঠাঁই নেই, গাদাগাদি অবস্থায় আছে ইত্যাদি বিশ্লেষণ দেয়া হয়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, স্বাভাবিক সময়েই দেশের ৬৮ কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী রাখা হচ্ছে। তবে গ্রেফতার অভিযান চালানো অব্যাহত থাকলে কিংবা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী থাকলে অসুবিধা তো হবেই, এটা সবারই জানা কথা। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের সময়ে গ্রেফতার অভিযান তত জোরদার নয়, যত জোরদার বলা হচ্ছে, তা পরিসংখ্যানই প্রমাণ দেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৭ দিনে রাজধানীতে প্রায় ১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জনকে নাশকতাকালে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৬৭ ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ৩৯। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে ২৮ জনকে। এ বিষয়ে রাজধানীর ৪৯ থানায় ১৬৭ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পর থেকে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৩ সালে গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে দেশের ৬৮ কারাগার ৮৫ হাজার বন্দীকে রাখার রেকর্ড অতিক্রম করতে হলে আরও অন্তত ১৯ হাজারের বেশি গ্রেফতার করতে হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে না। এখন শুধু পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার দুর্বৃত্ত, হুকুমদাতা, মদদদাতা, অর্থের যোগানদাতা এই ধরনের আসামিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত আসামির তালিকায় পেট্রোলবোমা তৈরি, বহন, নিক্ষেপ, যানবাহনে আগুন, বোমাবাজি ইত্যাদির সঙ্গে যুবদল, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে। গত ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে গত ৪ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যানবাহনে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে হতাহতের ঘটনা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
×