ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ পর্যন্ত তেল মিলল না কৈলাসটিলায়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শেষ পর্যন্ত তেল মিলল না কৈলাসটিলায়

রশিদ মামুন ॥ আলোচিত কৈলাসটিলায় শেষ পর্যন্ত তেল পাওয়া গেল না। তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ২০১২-এর মে মাসে পেট্রোবাংলা এ খনিতে তেল মজুদের খবর দিয়ে হইচই ফেলে দেয়। কিন্তু কৈলাসটিলা-৭ খনন শেষে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে গ্যাসের সঙ্গে প্রচুর কনডেনসেট রয়েছে। দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন। এ ধরনের ঘটনা দেশের তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘জিওলোজির ছাত্র হিসেবে আমিওতো বুঝি না এ ধরনের ঘোষণা কীভাবে দেয়! এতে দেশে শুরু হওয়া তৃতীয়মাত্রার জরিপ প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জরিপে যে ফলাফল উঠে আসে তা কেবলমাত্র সম্ভাবনার চিত্র। কূপ খনন করার আগে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যায় না। বলাটা উচিতও নয়। পেট্রোবাংলা থেকে আর আগে দৈনিক কত ব্যারেল তেল পাওয়া যাবে সে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আশাতো সবাই করে, কিন্তু সবক্ষেত্রেইতো আর সব আশা পূরণ হয় না। আশা জাগানো সিলেট গ্যাসফিল্ডের কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপটি গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে খনন শুরু করে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স। কূপটি খননে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। খননযন্ত্র (রিগ) বিজয়-১০ দিয়ে কূপটি খনন করা হচ্ছে। খননের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা জানান, তিন হাজার ৫০১ থেকে তিন হাজার ৫০৪ মিটার, তিন হাজার ২৬২ থেকে তিন হাজার ২৬৬ মিটার ও তিন হাজার ১২১ থেকে তিন হাজার ১২৭ মিটার গভীরতার তিনটি স্তর পরীক্ষা করে তেলের সন্ধান মেলেনি। ওপরের স্তরটিতে (৩১২১ থেকে ৩১২৭ মিটার) গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে গ্যাসের সঙ্গে প্রচুর কনডেনসেটও রয়েছে। এখন পরীক্ষা চলছে (ড্রিলিং স্টিং টেস্ট)। কতটুকু গ্যাস পাওয়া এ সম্পর্কে আগামী সপ্তাহে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে। সিলেট গ্যাসফিল্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তোলিত তেল এবং গ্যাসের মধ্যে ৪০ ভাগ তেলের উপস্থিতি থাকলে ওই খনিকে তেল খনি বলা চলে। অপরিশোধিত তেল কনডেনসেটের চেয়ে ভারি হয়। মঙ্গলবার সেখান থেকে গ্যাস ফ্লো হয়েছে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে কৈলাসটিলা-৭ এর প্রকল্প পরিচালক হারুন মোল্যা জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়নি। পরীক্ষা শেষ করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ঘোষণা দেব। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে গ্যাস উঠছে আবার বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। এখানে কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বাকী পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। দেশে প্রথমবারের মতো পরিচালিত হরিপুর এবং কৈলাসটিলায় তৃতীয়মাত্রার জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ২০১২ সালের মে মাস আনুষ্ঠানিকভাবে পেট্রোবাংলা তেল থাকার কথা জানায়। খনিতে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ জানান হয় ১০ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল। তখন পেট্রোবাংলা জানিয়েছিলো, এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ চার কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলনযোগ্য। পেট্রোবাংলা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, বাপেক্স কৈলাসটিলা ও হরিপুরে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করে। এ জরিপের মাধ্যমে সিলেটের কৈলাসটিলা ও হরিপুরে দুটি তেলক্ষেত্র চিহ্নিত করে। কৈলাসটিলা ও হরিপুরে বিদ্যমান ক্ষেত্র দুটির গ্যাস স্তরের নিচে এ তেলের অবস্থান রয়েছে। এর মধ্যে কৈলাসটিলায় ভূপৃষ্ঠের তিন হাজার ২০০ মিটার থেকে চার হাজার মিটার গভীরতায় পাঁচটি তেল স্তর রয়েছে। অন্যদিকে হরিপুরে ভূপৃষ্টের দুই হাজার ৬০০ মিটার নিচে তেলের অবস্থান পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তেলের মজুদের পরিমাণ দুই কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ ব্যারেল উত্তোলনযোগ্য। ঘোষণার সময় তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন চাপ ছিল না জানিয়ে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতি বুধবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করে জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করেছি। এখানে আমরা একটি সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেই সম্ভাবনা নিশ্চিত হওয়া যায় কেবলমাত্র কূপ খনন করার পরে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আমাদের ওপর গ্যাসক্ষেত্রকে তেলক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য কোন চাপ ছিল না।
×