ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমানে কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ

লজ্জা! সিডনিতে বাংলাদেশী সাংবাদিক আটক

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

লজ্জা! সিডনিতে বাংলাদেশী সাংবাদিক আটক

ফজলুল বারী, সিডনি থেকে ॥ বিমানের ভেতরে এক বিদেশিনী ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের এক ক্রীড়া সাংবাদিককে আটক করেছে সিডনি পুলিশ! ইন্ডিপেন্ডেন্টস টেলিভিশনের ওই সাংবাদিকের নাম বা অপরাধ পুলিশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে সহযাত্রী সাংবাদিকরা বলেছেন, আটক সাংবাদিকের নাম রহমান পিয়ার। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উৎসব কভার করতে তিনি বুধবার সকালে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিডনি এসে নামার পর এই আটকের শিকার হন। সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি লিডার সিরাজুল হকের বিমানবন্দর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ এ মুহূর্তে কোন তথ্য প্রকাশ করতে চায়নি। জনকণ্ঠের পক্ষে যোগাযোগ করা হলেও একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ ক্রিকেট উৎসব কভারের উদ্দেশে বুধবার মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একই ফ্লাইটে এসেছেন বাংলাদেশের আরও কয়েক সাংবাদিক। এই সাংবাদিকদের একজন জনকণ্ঠকে বলেন, কোরিয়ান ওই মেয়েটি অভিযোগ করে তার পার্শ্ববর্তী আসনের ওই যাত্রী ঘুমন্ত অবস্থায় তার গায়ে হাত দেয়! আরেক সাংবাদিক বলেন বিমানে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। উচ্চৈঃস্বর বাদানুবাদ শুনে ঘুম থেকে তারা জেগে ওঠেন। অন্ধকার ফ্লাইটে এরবাইরে তারা কিছু দেখেননি। বিমানটিতে ওই ছাত্রীর শিক্ষকও ছিলেন। সিডনি কিং জর্জ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, সেই বিদেশিনী ছাত্রীর সেই শিক্ষক অভিযোগটি ফ্লাইট এটেনডেন্টদের জানালে আকাশে থাকা অবস্থাতেই অভিযোগটি সিডনি এয়ারপোর্ট অথরিটিকে জানানো হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ফ্লাইটটির জন্যে অপেক্ষায় থাকে। ফ্লাইটটি ল্যান্ডিং এর পর প্রায় দশ মিনিট কাউকে নামতে দেয়া হয়নি। ফ্লাইট এটেনডেন্টদের মাধ্যমে সেই সাংবাদিককে শনাক্তের পর পুলিশ তাকে তাদের জিম্মায় নিয়ে যায়। ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটি সূত্র বলেছে ঘটনার ব্যাপারে তাদের অনুরোধে সম্পৃক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। আটক সাংবাদিককে এর মাঝে ইন্টারপ্রেটর সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা আশাবাদী তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন করা হবে না। সিডনি প্রবাসী এক বাংলাদেশী আইনজীবী জানান, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় কাউকে আটকের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। এর আগেই আটক ব্যক্তি এক আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন। আইনজীবী নিয়োগে অসমর্থ হলে সরকার থেকে তাকে আইনজীবী দেয়া হবে। সূত্রটি বলেছে, অভিযোগ গঠন ও আদালতে উপস্থাপনের পর জামিনের আবেদন করা হলে সাধারণত এ ধরনের কেসে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু তার পাসপোর্ট জব্দ করা হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে পারবে না। তবে জামিন হয়ে গেলে তাকে বিশ্বকাপের খেলা কভারের সুযোগ দেয়া হতে পারে। আবার অভিযোগ গঠন না হলে কোন সমস্যাই এতদূর গড়াবে না। বুধবারের ঘটনায় একই ফ্লাইটে আসা সহযাত্রী সাংবাদিকরা বিব্রত অবস্থায় পড়েন। সহকর্মীর জন্য তাদের অনেকে অপেক্ষায় থাকেন বিমানবন্দরে। কারণ সহকর্মী এই সাংবাদিককে তারা খুবই সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে চেনেন-জানেন। তিনি কোন ভুল বোঝাবুঝির শিকার কিনা তা নিয়েও তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। সিডনিতে আসা এই সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রবাসী কমিউনিটিতে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র একটি বিব্রত-হতভম্ভ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটি খুবই আইনানুগ সম্প্রদায় হিসেবে প্রশংসিত। এ ধরনের অভিযোগ এর আগে কোন প্রবাসী বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে শোনা যায়নি। বিশ্বকাপ কভার করতে আসা বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মাধ্যমে বুধবারের ঘটনা টিম বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও জেনে যান। একাধিক সাংবাদিক বিসিবির মিডিয়া কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানান। মিডিয়া কর্মকর্তা ঘটনা জানান দলের ম্যানেজারকে। খেলোয়াড়রা ঘটনা জানেন ম্যানেজারের মাধ্যমে। বুধবার সিডনির ব্ল্যাকটাউন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস পার্কে দলের অনুশীলন পরবর্তি মিডিয়া ব্রিফিং শেষে রুবেলের ঘটনা উল্লেখ করে ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকের কাছে জানতে চান, এ ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করা হবে কিনা!
×