মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সাজারি ইউনিটটি বোমার আগুনে পোড়া মানুষের গন্ধ আর আহাজারিতে শ্মশানে পরিণত হয়েছে। প্রতিক্ষণেই আসছে পোড়া মানুষ। কেউবা ফিরছে লাশ হয়ে কেউবা চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়। নানামুখী সমস্যা থাকলেও এই ইউনিটের চিকিৎসক আর কর্মীরা আর্তমানবতার সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতদিন নীরবে-নিভৃতে থেকে চিকিৎসা সেবা চালালেও সাম্প্রতিক দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের চিকিৎসা সেবা দেয়া নিয়ে লাইমলাইটে উঠে আসে ইউনিটটি।
জানা গেছে, এ অঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল রংপুরের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের। তবে প্রতিষ্ঠাকালে যে জনবল ও অবকাঠামো দিয়ে শুরু হয়েছিল এর কার্যক্রম এখনও চলছে তা দিয়েই। মাত্র ১৪ টি বিছানা এবং একজন সহকারী অধ্যাপকসহ ৫ সিএ ও সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ৭ সেবিকা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখনও রয়েছে তাই-ই। জানা গেছে, ১৪ টি বিছানা থাকলেও প্রতিদিনই এখানে গড়ে থাকছে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ রোগী। যেখানে আগুনে পোড়া রোগীর নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে রাখার কথা, সেখানে বিছানা অভাবে তাদের অনেককেই রাখতে হচ্ছে অন্য ওয়ার্ডে। ফলে তারা সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া এখানে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপকের পদ থাকলেও তা নেই শুরু থেকেই। নেই চিকিৎসক এবং সেবিকাদের বসার মতো কোন কক্ষও। এক রুমেই চার সিএ সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ইন্টার্নদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এ ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মারুফুল ইসলাম জানান, এমনিতেই সারা বছর এ ইউনিটে রোগীর সংখ্যা বিছানার চেয়ে দ্বিগুণ থাকে। আর বর্তমানে এই পেট্রোলবোমা নৈরাজ্যের কারণে এখন তিল ধারণের জায়গা দেয়া যায় না। এতে করে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। তিনি জানান, এছাড়া রয়েছে সেবিকা ও স্পেস সঙ্কট। পোড়া রোগী এলেই প্রথমে তাদের গোসল কিংবা ক্ষতস্থান পরি¯ষ্কর করে নিতে হয়। নইলে ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু এই যে গোসলখানা কিংবা বাথরুম তা চাহিদার তুলনায় নেই বললেই চলে। ড্রেসিং রুমের অবস্থাও একই রকম। তিনি জানান, গত দেড় মাসে এখানে পেট্রোলবোমায় পোড়া অন্তত ৫০ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭জন এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮ জন। তিনি জানান, শত প্রতিকূলতার মাঝেও দিনরাত তারা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অবিলম্বে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল এবং অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি করা না হলে বিনা চিকিৎসায় অনেককে ফেরত যেতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আব্দুল বাতেন জানান, জনবল ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়ানোর জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ে লিখেছেন। তিনি আশাবাদী খুব সত্বর সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: