ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান আইলো দারুণ ফাগুন রে/ লাগলো মনে আগুন রে...। মনে আগুন লাগানো ফাগুন এসেছে। মাসের প্রথম দিন আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বসন্ত। ঋতুরাজের আগমনে দারুণ উৎসবের আমেজ এখন বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায়। গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল বসন্ত বরণের প্রস্তুতি। আর তারপর আজ শুক্রবার ভোরবেলা থেকে শুরু হচ্ছে উৎসব। চারুকলার বকুল তলায় শ্রোত নামবে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের। একইসঙ্গে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আরও চারটি ভেন্যুতে। তবে বসন্ত উৎসব সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বাংলা একাডেমি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্রোত নামবে মানুষের। বই আর বসন্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। অবশ্য একদিন আগে বৃহস্পতিবারও রেশ ছিল বসন্তের। অমর একুশে গ্রন্থমেলার এখানে ওখানে দেখা গেছে গাঁদা ফুলের মালায় সেজে আসা তরুণীদের। বসন্তের হলুদ শাড়ি পরে অনেকেই মেলা ঘুরেছেন। যথারীতি চলেছে বই দেখা ও কেনার কাজ। একই দিন প্রথমবারের মতো মাঠে নামে বিশেষ টাস্কফোর্স। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে পাইরেটেড বইয়ের স্টল চিহ্নিত করেন কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। অভিযানের সময় কয়েকটি স্টলকে অন্যের বই বিক্রি করায় সতর্ক করা হয়। ১২তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছিল ১০০টি। আজ বসন্ত শুরুর দিনে নতুন বইয়ের সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে জনিয়েছেন প্রকাশকরা। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের সত্ত্বাধিকারী জহিরুল আবেদিন জুয়েল জনকণ্ঠকে বলেন, বসন্ত শুরুর দিনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন সব বয়সী মানুষের ঠিকানা হবে অমর একুশে গ্রন্থমালা। আজ তাই বিক্রিও অনেক বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশু সংগঠক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খালেক বিন জয়েনউদদীন। আলোচনায় অংশ নেনÑ মাহবুব তালুকদার, আলী ইমাম, লুৎফর রহমান রিটন এবং প্রত্যয় জসীম। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। প্রাবন্ধিক বলেন, শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশ ও মানবিক উৎকর্ষ সাধনে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ছিলেন এদেশের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। পূর্ববঙ্গে শিশু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও শিশুদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব এখনও অম্লান। শিশুদের অধিকার আদায় এবং শিশুদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ছিলেন আজীবন সংগ্রমী। একজন শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তার বিশিষ্টতা অসামান্য। তিনি বলেন, দাদাভাই সারাজীবন শিশুসাহিত্য, শিশু সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং শিশুদের পাতা ও পত্রিকা সম্পাদনা করে শিশুদের স্বপ্নের জগত আলোকিত করেছিলেন। নব্বইতম জন্মবর্ষে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আলোচকরা বলেন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ছিলেন অনুপ্রেরণার মানুষ। শিশু-কিশোরদের মাঝে উন্নত চেতনার জন্ম দান ও তার বিকাশে দাদাভাইয়ের অবদান কখনও ভুলার নয়। তিনি সম্ভাবনাময় লেখকদের শিশু-কিশোরদের মাঝ থেকে খুঁজে বের করতেন এবং তাদের ভবিষ্যতের রতœ হিসেবে নির্মাণে ভূমিকা রাখতেন। শিশু-কিশোরদের মাঝে উদ্ভাবনময়তা, দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ, মুক্তবুদ্ধির প্রসারে দাদাভাই আমৃত্যু তার লেখকসত্ত্বা ও সাংগঠনিকসত্ত্বা সক্রিয় রেখেছিলেন। বাংলাদেশের সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি এক চিরস্মরণীয় নাম। সভাপতির বক্তব্যে হাশেম খান বলেন, শিশু-কিশোরদের মাঝে আলোক-ফোয়ারা বইয়ে দিয়ে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের মতো মানুষেরা বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক-সুন্দর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল তার নেপথ্যে ছিল রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও তার কচিকাঁচাদের সৃষ্টিমুখর তৎপরতা। সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন- কণ্ঠশিল্পী সাদী মহম্মদ, লিলি ইসলাম, তপন মাহমুদ, ফাতেমাতুজজোহরা, লীনা তাপসী, ইয়াকুব আলী খান ও আজিজুর রহমান তুহিন, সুমন মজুমদার ও মাহবুবা রহমান। এছাড়াও ছিল আবৃত্তি সংগঠন ‘শ্রুতিঘর’ ও সংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’র পরিবেশনা। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি চত্বরে উৎস প্রকাশন পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উৎস প্রকাশন এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। ২০১৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন করে পুরস্কার পান সমকালের স্টাফ রিপোর্টার প্রতিবেদক এসএম মুন্না। বিকেলে গ্রন্থমেলার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদপত্র ও অর্থমূল্যর চেক তুলে দেয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক ফরিদ হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- উৎস প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা সেলিম। পুরস্কারটি মুন্না ভোরের কাগজের প্রয়াত সাংবাদিক কিশোর কুমারকে উৎসর্গ করেছেন।
×