ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাখাওয়াতের জামিন আবেদনের ওপর আদেশ ১ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সাখাওয়াতের জামিন আবেদনের ওপর আদেশ ১ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির না করায় পুলিশের আইজি ও হবিগঞ্জের এসপিকে এ বিষয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে দুই আসামিকে কারাগারে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যশোরের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমান জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের জামিনের আবেদনের ওপর আদেশ প্রদান করা হবে ১ মার্চ। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াকে। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ও প্রসিকিউটর শুনানি করেন। দুই আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি সে জন্য আইজিপি ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। উল্লেখ্য, ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও বৃহস্পতিবার তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন আসামি ১) মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া পিতা-মৃত দরছ উদ্দিন, সাং-কুমুরসানা, থানা- বানিয়াচং, জেলা-হবিগঞ্জ রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। ১৯৭১ সালে ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হবিগঞ্জ সদরে প্রবেশ করে। তখন সৈয়দ কামরুল আহসান ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার নেজামী ইসলামের নেতা। তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের স্বাগত জানিয়ে হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচং সিও অফিসে তাদের ক্যাম্প করে দেয়। ১৯৭১ সালের মে মাসের যে কোন দিন নেজামে ইসলামের নেতা সৈয়দ কামরুল আহসানের নেতৃত্বে সৈয়দ ফজলুল হক থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক এবং সাহাবুদ্দিন মোক্তারকে শান্তি কমিটির থানা সভাপতি করে বানিয়াচং থানা শান্তি কমিটি ও পরবর্তীতে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। বানিয়াচং থানার খাগাউড়া গ্রামে অবস্থিত সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে ছিল বানিয়াচং থানার প্রধান রাজাকার ক্যাম্প। এ ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার ছিল আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়ার ভাই মোস্তাফা (মৃত) এবং বড় ভাই কলমধর (মৃত) ছিল ৮নং খাগাউড়া ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। রাজাকার কমান্ডারের নির্দেশে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও তার ভাই মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াসহ ২০-২৫ জন এ ক্যাম্পের রাজাকার সদস্য হয়ে তাদের অধীন রাজাকার বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে ক্রমাগত বাঙালী নিধনযজ্ঞে সহায়তা করে এবং রাজাকার বাহিনীকে দিয়ে বানিয়াচং থানা এলাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ৩(২) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বিতাড়নসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত করে। সাখাওয়াত হোসেন ॥ জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের জামিনের আবেদনের ওপর আদেশ প্রদান করা হবে ১ মার্চ। আসামি ও প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ২০১৪ সালের ২৯ নবেম্বর সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে রাজধানীর উত্তরখানের মাস্টারপাড়া শাহী মসজিদের কাছে ভাড়া বাসা থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য নথিভুক্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৩ নবেম্বর থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত এক সময় ছিলেন জামায়াত নেতা। ১৯৯১ সালে জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আবারও পরাজিত হন। এ সময় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরে ২০০৬ সালে অলি আহমেদের এলডিপিতে যোগ দিলেও পরের বছর তিনি যোগ দেন ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীর পিডিপিতে। এর পর তিনি আবার এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান।
×