ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রস্তুতি ম্যাচে লজ্জা দিল আইরিশরা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রস্তুতি ম্যাচে লজ্জা দিল আইরিশরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক এক করে ম্যাচ হেরেই চলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্দেশ্যে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও বাংলাদেশের হার হয়েছে। বেহাল অবস্থা হচ্ছে। সেই অবস্থা বিরাজ রয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের কাছেও ৪ উইকেটে হেরেছে মাশরাফিবাহিনী। সেই হারে দল নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়ে গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের। সেই ম্যাচেও বাংলাদেশ হারবে না, এ নিশ্চয়তাও এখন মিলছে না। যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড হারে ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে, সেই আইরিশদের বিপক্ষে মাশরাফিরা কুপোকাত হয়ে গেল! অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ হারের পর দলকে নিয়ে যে ‘হায় হায়’ রব উঠেছিল, পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াকু মনোভাবে তা দূর হয়ে গিয়েছিল। আবার আইরিশদের বিপক্ষে হারে সেই রব উঠে গেল। সেই সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার যে স্বপ্ন দেখা হয়েছে, সেই স্বপ্নেও ছেদ পড়ে গেল। এখনত আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাবে বাংলাদেশ, তাতেও অনিশ্চয়তা মেঘ ঘিরে ধরল। সিডনির ব্ল্যাকটাউন অলিম্পিক পার্ক ওভালে খেলাটি হয়। টস জিতে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করতে পাঠায়। দুই পেসার ম্যাক্স সোরেনসেন (৩/৩১) ও জন মুনি’র (৩/৩২) বোলিং তোপেই জেতার স্বপ্ন মাটি হয়ে যায়। ৪৮.২ ওভারে ১৮৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন। মুশফিকুর রহীম ২৬, এনামুল হক বিজয় ২৫, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২২, সাব্বির রহমান রুম্মন ২০ রান করেন। জবাবে ৬ উইকেটে ৪৬.৫ ওভারে ১৯০ রান করে জিতে যায় আয়ারল্যান্ড। এ্যান্ডি বালবির্নি একাই অপরাজিত ৬৩ রান করেন। এড জয়সের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ রান। তাইজুল ইসলাম সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিতে সক্ষম হন। ম্যাচটি জেতা বাংলাদেশের জন্য খুবই দরকার ছিল। বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। এ ম্যাচে জিতলে মূল পর্বে আত্মবিশ্বাস নিয়েই দল খেলতে নামতে পারত। সব শক্তি কাজে লাগিয়েও ম্যাচটি জিততে পারল না বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে তামিম (৪), এনামুল, মুমিনুল (৮), সৌম্য, সাকিব (৮), মুশফিক, সাব্বির, নাসির (৬), মাশরাফি, তাইজুল (০), তাসকিন (০*) খেলেছেন। মাহমুদুল্লাহ, রুবেল ছাড়া সেরা একাদশই খেলেছে বলা চলেছে। অথচ ব্যাটিংয়ে এমন দুর্দশা। ব্যাটসম্যানরা যে ভাল পেস আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়বেন, তা আবারও বোঝা গেল। আয়ারল্যান্ডের দুই পেসারই ডুবিয়ে দিলেন ব্যাটসম্যানদের। ৩০ রানের মধ্যেই তামিম, মুমিনুল আউট হয়ে যান। এরপর এনামুল-সৌম্য মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন। যেই দলের স্কোর ৮৮ রানে যায়, এনামুলও সাজঘরে ফেরেন। ১১০ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেটের পতন ঘটে। সাকিব, সৌম্যের আউটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তখনও দলের স্কোর ২০০ ছাড়াবে সেই আশা করা হয়। ষষ্ঠ উইকেটে আরও ৪৪ রানের জুটি গড়াও হয়। মুশফিক-সাব্বির মিলে সেই আশা দেখাচ্ছিলেনও। কিন্তু যেই দলের স্কোর ১৫৪ রানে যায়, মুশফিক আউট হতেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। ৩৫ রানের মধ্যে আরও ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। বাংলাদেশের ইনিংসও গুটিয়ে যায়। বোলিংয়ে মাশরাফি, তাসকিন, সাকিব, তাইজুলের মতো বোলাররা থাকায় তখনও জয়ের আশা থাকে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড যে ১১৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই আশা শেষপর্যন্ত হতাশাতেই পরিণত হয়। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং করা এগারোজনের বাইরে থাকা ক্রিকেটারও বোলিং করতে পারবেন। তাই আল আমিনও বোলিং করলেন। কিন্তু কোন লাভই হলো না। তাইজুল শুধু ২ উইকেট নিতে পারলেন। আল আমিন, তাসকিন, সাকিব, নাসিরও ১টি করে উইকেট নিলেন। কিন্তু আয়ারল্যান্ডকে হারানো গেল না। উল্টো যেন ‘আরাম-আয়েশে’ই জয় তুলে নিল আইরিশরা। ৭৮ রানের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ৪ উইকেট (স্টারলিং, পোর্টারফিল্ড, নেইল ও ব্রায়ান, উলসন) শিকার করা গেলেও এরপরই ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পঞ্চম উইকেটে জয়েসে ও বালবিরনি মিলেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। ৫৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ১৩৭ রানে জয়সেও আউট হন। কিন্তু ততক্ষণে আয়ারল্যান্ডের জিততে রান লাগে ৬৯ বলে ৫২। হাতে থাকে ৫ উইকেট। ষষ্ঠ উইকেটে বিলবিরনি ও কেভিন ও’ব্রায়ান মিলে ৪১ রানের জুটি গড়ে ফেলায় আর বাংলাদেশ ম্যাচ রক্ষা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় আয়ারল্যান্ড। সেই সঙ্গে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হারার শোক থেকে মুক্তি পায় আইরিশরা। অথচ বাংলাদেশ বেহাল দশায় পড়ে। দলকে নিয়ে যে আশা ছিল, এ হারে তাতেও চিড় ধরতে শুরু করে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এত দুর্দান্ত খেলা দল বিশ্বকাপের মঞ্চে দুমড়ে মুছড়ে যেতে পারে, সেই পুরনো হারের গোলকধাঁধার স্মৃতিতেও আটকা পড়তে পারে; সেই শঙ্কাই এখন জেগে গেছে। প্রস্তুতি ম্যাচে বিশেষ করে বিশ্বকাপের গন্ধযুক্ত ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ বরাবরই হারে। এবারও হেরেছে। দেখা যাক, এখন শেষপর্যন্ত কী হয়। বিশ্বকাপের আসল মঞ্চে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই হয় এখন।
×