ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের বিচার

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জঙ্গীদের বিচার

পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ডের হুকুমদাতা, অর্থ যোগানদাতা এবং যারা তা করছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে জঙ্গীদের সাজা হচ্ছে ঠিক সেভাবে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রদত্ত বক্তৃতা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষকে দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারণ দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। মাসাধিককাল ধরে নাশকতা চালাচ্ছে যে শক্তিটি সেটি যে বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী নয়, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সারাদেশে পেট্রোলবোমার সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। বিগত ৩৯ দিনের ভেতর দুয়েকটি দিন বাদে প্রতিদিনই তারা পেট্রোলবোমা ছুড়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। পেট্রোলবোমার লাগাতার সন্ত্রাস এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এমন নির্মম অগণতান্ত্রিক পৈশাচিকতাও প্রত্যক্ষ করেনি মানুষ। সাধারণ মানুষকেই টার্গেট করে পেট্রোলবোমা ছোড়া হচ্ছে। সেই বোমার আগুনে পুড়ে বহু মানুষ কয়লা হয়ে গেছেন। যাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হননি, তাঁদের স্থান হয়ে উঠেছে বার্ন ইউনিট। সেখানে তীব্র অসহ্য যন্ত্রণার ভেতর সময় যাচ্ছে তাঁদের। মানুষকে এমন বীভৎস উপায়ে কষ্ট দেয়ার নাম কি রাজনীতি? এটা রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এটা নিশ্চিতভাবেই মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখব প্রায় সব ক’টি দেশকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদের ছায়া হুমকিস্বরূপ বিরাজ করছে প্রায় সর্বত্র। বাংলাদেশকে সেই একই ধারায় নেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টায় এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজনীতির পোশাক পরিহিত নব্য ও পুরনো সন্ত্রাসী দুটি দল। লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশকে অবশ্যই যে কোন মূল্যে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৬৩ জনের হাতে প্রত্যেককে দশ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতের চেক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে। এই সহায়তা পেয়ে আনন্দে-আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেকে। ইতোমধ্যে যাঁরা হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন তাঁরাও এই সহায়তা পাবেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সহিংসতার শিকার সবার দায়িত্বই সরকার গ্রহণ করবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত শুধু নয়, প্রশংসনীয়ও বটে। জঙ্গীবাদ এখন বিভিন্ন দেশে বিষদাঁত বসাচ্ছে। তালেবান, আল কায়দা, আল শাহাব, বোকো হারামের মতো বিভিন্ন চরমপন্থী কর্মকাণ্ড গত বেশ কয়েক বছরে শত শত নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গজিয়ে ওঠা ইসলামিক স্টেট তথা আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী নৃশংসতায় পূর্বসূরিদেরও বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে। ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে আইএস ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা দেখে শিউরে উঠতে হয়। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের ওপরেই ন্যস্ত। দেশবাসী সরকারের কাছে দৃঢ়তা আশা করে পেট্রোলবোমার আতঙ্কের অবসান চায়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানুষের মনে তাই আশার সঞ্চার করেছে। যত তাড়াতাড়ি জঙ্গীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই।
×