ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হামলা, লুটপাট ও শ্লীলতাহানির শিকার

রাঙ্গাবালীর সংখ্যালঘুরা পাঁচ দিন ধরে অবরুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাঙ্গাবালীর সংখ্যালঘুরা পাঁচ দিন ধরে অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের কানকুনিপাড়া গ্রামের দাসেরকান্দা পাড়ার ২৮টি সংখ্যালঘু পরিবারকে গত পাঁচ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তারা ভয়ে আতঙ্কে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। তাদের দেশ ছাড়া করা এবং ঘরের নারীদের তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে খুন জখম ও লুটপাটের। এর আগে এসব পরিবারের ওপর দফায় দফায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। কুপিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে অন্তত ১০ জনকে। এর মধ্যে ৪ জনকে গুরুতর আহতাবস্থায় পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় বিএনপির ক্যাডাররা এসব নারকীয় ঘটনার নেতৃত্ব দিলেও নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে। ফলে আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। রাঙ্গাবালী পুলিশ ঘটনার কিছুই জানে না বলে দাবি করেছে। নির্যাতিত পরিবারগুলোর কয়েক সদস্য জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির সঙ্গে দাসেরকান্দা পাড়ার কয়েক শিশু-কিশোর দুষ্টুমি করে। এর জের ধরে সন্ধ্যায় স্থানীয় শীর্ষ বিএনপি নেতা রুহুল আমিন সিকদার, মিলন সিকদার, বাবু গাজী, সালাম, সুজন ও কালামসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে ৭০/৮০ ভাড়াটে লাঠিয়াল সন্ত্রাসী আকস্মিকভাবে দাসেরকান্দা পাড়ার হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাড়াটে ক্যাডার শাকিলের নেতৃত্বে কয়েক যুবকও এ হামলায় যোগ দেয়। ছ্যাঁনা, লোহার রড, লাঠি, দা’সহ দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলাকারীরা প্রথমেই যুধিষ্টির দাসের ঘর লুট করে এবং ভাংচুর চালিয়ে ঘরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। হামলাকারীরা একই কায়দায় আরও তিনটি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিহির দাসের হ্যাচারি থেকেও হামলাকারীরা লাখ খানেক টাকা দামের কাঁকড়া লুট করে। মিহির দাস অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা বাড়ির নারীদের টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনে নারকীয় কায়দায় শ্লীলতাহানি করে। এছাড়া কুপিয়ে পিটিয়ে ১০ জনকে আহত করে। আহতদের মধ্যে নিপেন দাস, শেখন দাস, অর্জুন দাস ও রামু দাসকে গুরুতর অবস্থায় পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তাকেসহ আরও কয়েক জনকে ঘরের বাইরে এনে পৈশাচিক কায়দায় শ্লীলতাহানি করে। স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভঙ্কর দাস অভিযোগ করেন, তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, রাতভর কয়েক দফায় এভাবে তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। মিহির দাস অভিযোগ করেন, রাতে একবার ইউপি চেয়ারম্যান এসে হামলাকারীদের বিচার করার আশ্বাস দিয়ে চলে গেছেন। এরপর তার দেখা মেলেনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও লাপাত্তা হয়ে গেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় তিনি গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে গিয়েও পারেননি। তাঁরা ঘরের বাইরে কাজকর্ম করতে যেতে পারছেন না। নারীরা ঘরের বাইরে আসছে না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। পাড়ার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে হামলা-লুটপাটকারীরা প্রকাশ্যে তাদের দেশছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। নারীদের ঘর থেকে তুলে নেয়ার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে করে তাঁরা আরও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের এক অজানা আতঙ্কে কাটছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তক্তাবুনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি, আওয়ামী লীগ নেতা মনির আকন ও এনামুল হক লিটুসহ নেতৃস্থানীয় কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘটনায় নেপথ্যে থেকে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। বতর্মানে সেখানকার অবস্থা এতটাই আতঙ্কজনক যে, আক্রান্তদের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। পটুয়াখালী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতুল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার দাস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, আক্রান্ত হিন্দুদের জানমাল রক্ষায় কঠোর প্রহরা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
×