ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিক্ষোভে মাঠে নেই কেউ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিক্ষোভে মাঠে নেই কেউ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা অবরোধ-হরতালের মতো বিএনপি জোটের ডাকা শনিবারের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচীও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালনের ডাক দিয়েও কোথাও মাঠে ছিলেন না বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা। এমনকি এ কর্মসূচী পালনের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতিও চাননি। তবে পুলিশের অনুমতি না চাইলেও বিচ্ছিন্নভাবে কোন কোন জায়গায় ঝটিকা মিছিলের নামে ফটোসেশন করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। তারপরও বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই দুপুর সাড়ে ১২টায়ই চলমান টানা অবরোধ কর্মসূচীর মধ্যেই আগের ২ সপ্তাহের মতো ফের বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সারাদেশে টানা ৭২ঘণ্টা হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এতেই বোঝা যায় বিএনপি জোটের এই হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত ছিল পূর্বঘোষিত এবং আন্দোলন সফল করা তাদের উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য চোরাগোপ্তা হামলা করে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা হাসিল করা। দুই দিন বিরতি দিয়ে সালাউদ্দিনের নামে পাঠানো বিবৃতিতে আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতাল চলবে বলে বলা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সালাহ উদ্দিনের নামেই একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়, যাতে এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোর হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু পরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বলা হয়, ওই বিবৃতি বিএনপির নয়, সেটি ভুয়া ও বানোয়াট। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে অবরোধের মধ্যেই প্রায়ই হরতালের ডাক দিয়ে বিবৃতি আসছে। এই পরিস্থিতিতে শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ৩১ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অপর যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নামে ২০ দলীয় জোটের বিবৃতি গণমাধ্যমে আসছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে বরাবরই বলে আসছেন সরকার তাদের স্বাভাবিক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছে না। আর এ জন্যই তারা টানা অবরোধ-হরতাল পালন করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করার কথা জানিয়ে বলেন, এ কর্মসূচী পালন করতে না দিলে রবিবার সকাল থেকে আবারও অবরোধের মধ্যেই টানা হরতালসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালন করা হবে। তার এ বিবৃতিতে শনিবার বিক্ষোভ মিছিল করার কোন সময় দেয়া হয়নি। তবে শনিবার দুপুরের দিকে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ২০ দলীয় জোটের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে দ্রুত সটকে পড়ে। তবেই আগেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের ক্যামেরাপার্সনদের খবর দিয়ে ফটোসেশন করে তারা। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এক যৌথ বিবৃতিতে শনিবারের বিক্ষোভ মিছিল সফল করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার এ কর্মসূচী সফল করতে তারা নিজেরাই মাঠে নামার চেষ্টা করেননি। তাই তাদের অনুসরণ করে কোন নেতাকর্মী মাঠে নামেননি। তাই বরাবরের মতো ২০ দলীয় জোটের শনিবারের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচীটিও ব্যর্থ হয়। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডেমরা, বাবুবাজার, লালবাগ, মগবাজার, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী ও সেগুনবাগিচা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিল করেছে ২০ দলীয় জোটের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে কোথাও কোন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে নামার চেষ্টা করেনি। পুলিশের হাতে গ্রেফতার এড়াতেই তারা বিক্ষোভ মিছিল করতে মাঠে নামার চেষ্টা করেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দপুর দেড়টার দিকে বাবুবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া বিএনপি জোটের কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন । এ ঘটনায় আহত ৪ ও পুলিশ ১ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে । গতবছর ২৯ ডিসেম্বর গাজীপুরে সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়ায় হঠাৎ করেই বিদ্রোহী হয়ে উঠেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে এ বছর ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বড় ধরনের শোডাউন করতে চেয়েছিলেন তিনি। এ কর্মসূচীকে সামনে রেখে আগে থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে অচলাবস্থা সৃষ্টির প্রস্তুতি শুরু করেন খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি ৩ জানুয়ারি রাতে বাসা থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তবে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় একটি বড় সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা নাশকতার আগাম রিপোর্ট দেয়ায় বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। উপরন্তু ৪ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে র‌্যাব-পুলিশের পাহারা জোরদার করে বালির ট্রাক, জলকামান, সাজোয়া যান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। ৫ জানুয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। ওইদিন বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া। সেদিন বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন তিনি। কিন্তু পুলিশ গেটের তালা খুলে না দেয়ায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা গেটে লাথি মেরে সেøাগান মিছিলের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর পিপার স্প্রে করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে টানা অবরোধ পালনের ঘোষণা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলা টানা অবরোধ ও দফায় দফায় দেয়া হরতাল কর্মসূচী সফল করতে বিএনপি জোটের কোন কেন্দ্রীয় নেতাই মাঠে নামেননি। তবে তারা গোপন নির্দেশনা দিয়ে পেট্রোল হামলাসহ নাশকতায় লিপ্ত হন। আর এ কারণে ইতোমধ্যেই বিএনপি জোটের বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন।
×