ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘোষণা ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের’

নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করতে এনজিওরা একযোগে কাজ করবে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করতে এনজিওরা একযোগে কাজ করবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনীতির নামে চলমান নাশকতা সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করতে ও স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন একযোগে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট শুধু নির্বাচনকে ঘিরে। কিন্তু সঙ্কটের মূল আসলে অনেক গভীরে প্রোথিত। এর সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নটিও গভীরভাবে জড়িত। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হোক- মৌলবাদী শক্তি তা চায় না। এরা রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানোর সন্ত্রাস আমদানি করে একে দাবি আদায়ের একটি কৌশল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই এসব নাশকতা ও সন্ত্রাসের ব্যাপারে প্রশ্নহীন থাকছেন। তাই সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘাপটি মেরে থাকা এ সমস্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মাঠপর্যায়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে করণীয় ঠিক করা। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সহিংসতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে বিভিন্ন সামাজিক ও এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’-এর আয়োজন করে। এর কর্মপন্থা নির্ধারণে এ মতবিনিময় সভা আয়োজনের উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কৃষিশ্রমিক অধিকার মঞ্চের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রায় একই নামে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদাকে আহ্বায়ক গঠিত ’উদ্বিগ্ন নাগরিক কমিটি/নাগরিক সমাজের সঙ্গে সভার আয়োজকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। নামের বিষয়টি একেবারেই কাকতালীয়। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে নাম পরিবর্তন করা হবে। সভায় বাংলাদেশ পিস কাউন্সিলের সদস্য সচিব ড. আবুল কাশেম, ওয়েব ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসীন আলী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবীর, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের (বিইউপি) নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানু, স্টেপস’র নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) কর্মকর্তা আবদুল করিম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সভার শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ড. খলীকুজ্জমান বলেন, অবরোধ-হরতাল রাজনীতির পথ ধরে এলেও তা কার্যত সন্ত্রাসে রূপ নিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের দিনগুলোতেও একই রকম সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হয়েছে, যার মূলে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র। তারও আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই এ চক্র নাশকতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছিল। তাই এসব নাশকতা চূড়ান্তভাবে ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনসমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরী। তিনি বলেন, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে প্রান্তিক কৃষক উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। লিখিত বক্তব্যে অবিলম্বে সহিংসতা ও সন্ত্রাস বন্ধ, পেট্রোলবোমায় নিহত ও আহত মানুষের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও শ্রমজীবীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, মৌলবাদী ও জঙ্গীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। পরে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে একটি সংলাপ দরকার। তবে বিএনপির সঙ্গে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে। বিএনপির সঙ্গে কেবল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপ হতে পারে। এর আগে তাদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটগুলো দেখে আসা উচিত। এতে দগ্ধ মানুষদের মর্মবেদনা অত্যন্ত অনুধাবন করতে পারবেন। তবে কোন অবস্থাতেই জামায়াতের সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে সবাই মত ব্যক্ত করেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, যে দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের মূলনীতিতে বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার কোন বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা নেই। বক্তরা বলেন, জনগণের সমর্থনহীন বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। এ যুদ্ধে সফল হতে হলে সরকারকে তৃণমূল পর্যায়ের জনসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
×