ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে

‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বইমেলা নয়। তবুও উপচেপড়া ভিড়। শুধু একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নিয়ে আয়োজন। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শনিবার সরকারী ছুটির দিনে চট্টগ্রামে উৎসুক দর্শক-শ্রোতার ঢল নেমেছিল। অনুষ্ঠানস্থল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আর একটি বইকে নিয়ে সাজানো স্টলে তো রীতিমতো লাইন ধরে বই কিনেছেন যুবক-যুবতী আর বইপ্রেমীরা। রাজনৈতিক সচেতনরা এ আয়োজনে এসে প্রকাশনা উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেন। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বর্ণময় বহুমাত্রিক রাজনৈতিক জীবন কাহিনীর উপাখ্যান নিয়ে প্রকাশিত স্বপ্নের ফেরিওয়ালা গ্রন্থের এ প্রকাশনা উৎসব। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পাঁচ সহস্রাধিক শ্রোতার পদচারণায় ব্যতিক্রমধর্মী ও জমকালো প্রকাশনা উৎসব চট্টগ্রামে এই প্রথম। নন্দিত এ রাজনীতিকের জীবন কাহিনী নিয়ে বইটি রচনা করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠের উপ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোয়াজ্জেমুল হক। ৩৩৬ পৃষ্ঠা জুড়ে গ্রন্থে ফুটে উঠেছে সত্তরে পা দেয়া মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতনের নানা কাহিনী আর স্থিরচিত্র। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়...’ ব্যান্ড পার্টির বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে অতিথিদের অনুষ্ঠানস্থলে বরণ করে নেয়ার পর জাতীয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। নগরীর কেন্দ্রস্থলের জিইসি কনভেনশন হলটি সেজেছিল বর্ণাঢ্য সাজে। প্রকাশনা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে দেশবরেণ্য সমাজ বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, গ্রন্থের প্রধান চরিত্র চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ সকল অতিথি মঞ্চে উঠে যখন মোড়ক উন্মোচন করেন তখন হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান। এরপর গ্রন্থ লেখক মোয়াজ্জেমুল হকের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। একে একে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মইনউদ্দিন খান বাদল এমপি, নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চবি প্রো ভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, দৈনিক আজাদীর চীফ রিপোর্টার হাসান আকবর, গ্রন্থ প্রকাশক আবীর প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ নুরুল আবসার। সবশেষে গ্রন্থটি নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার সহধর্মিণী নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিশেষ আবৃত্তিকার মিলি চৌধুরী ও সাংবাদিক ফারুক তাহের। আলোচনা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে মহিউদ্দিনের প্রিয় গান, প্রিয় কবিতা ও তাকে নিয়ে রচিত কবিতা পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে পরিবেশিত হয় মেজবানির খাবার। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে তিনিই শেষ সেনাপতি। গণমানুষের এ নেতার শেষ জীবন যেন গৌরবের হয় সে কামনা করেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, এখন দেশে যা হচ্ছে তা হল একাত্তরের পুনরাবৃত্তি। মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ আমাদের সকলের কাঁধে চেপে বসেছে। এ কাজ বাস্তবায়নে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিকল্প নেই। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, আমি মহিউদ্দিনের বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও আন্দোলন সংগ্রামে সর্বদা নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সংগ্রামের অপর নাম মহিউদ্দিন। মইনউদ্দিন খান বাদল এমপি বলেন, জীবিত অবস্থায় কোন রাজনীতিবিদকে নিয়ে এ ধরনের গ্রন্থ রচনা বিরল। বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, যাদের কিছু নেই তারা মনে করেন মহিউদ্দিন তাদের লোক। এ অর্জন অনেক বড়। চট্টগ্রাম মহিউদ্দিনকে ভুলতে পারে না, মহিউদ্দিনও চট্টগ্রামকে ভুলতে পারেননি। আমরাও পারি না মহিউদ্দিন ছাড়া চট্টগ্রামকে কল্পনা করতে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, মানুষের দোষ গুণ থাকতে পারে। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের অভিভাবক। আওয়ামী লীগের কা-ারী হিসেবে তার অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া বলেন, শিক্ষার উন্নয়ন এবং অবদানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। সভাপতির বক্তব্যের সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, মহিউদ্দিন ছাড়া জীবন নির্যাতিত, পরাজিত মানুষের রাজনীতি করেছেন। চট্টগ্রামের কোন মানুষকে নিয়ে জীবদ্দশায় কোন গ্রন্থ রচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার ছাত্র মহিউদ্দিনকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আশীর্বাদ জানাই শিক্ষাশাস্ত্র ও সংস্কৃতি এগিয়ে নিতে মহিউদ্দিন যা করে গেছেন বাকি জীবনও তা যেন করে যান। অনুভূমি ব্যক্ত করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। কার জন্য কি করেছি তা মনে করার চেষ্টাও করি না। আমি বিত্তশালী ঘরের সন্তান নই। দরিদ্র মানুষের কষ্ট আমি দেখেছি। অনুভবে এনে তাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার স্বপ্নের মাত্র দশ শতাংশ পূরণ হয়েছে। বাকি নব্বই শতাংশ পূরণে আমৃত্যু লড়ে যাব। তার সহধর্মিণী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে ঘর করা খুবই কঠিন। তাদের কাছেও টানা যায় না, দূরেও ঠেলা যায় না। আমি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে চট্টগ্রামবাসীর কাছে উৎসর্গ করেছি। চার রঙে ছাপা গ্রন্থটির শেষাংশজুড়ে রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনের বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে এ্যালবাম। অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত স্টল থকে অনুষ্ঠান চলাকালে উৎসাহী অনেকেই গ্রন্থটি ক্রয় করেন। এর আগে সূচনা বক্তব্যে লেখক মোয়াজ্জেমুল হক গ্রন্থটি রচনা নিয়ে প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন।
×