ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার প্রতি রওশনের আহ্বান ॥ কূটনৈতিক জোন থেকে দলের অফিস সরানো নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত

জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসুন

সংসদ রিপোর্টার ॥ গুলশান-বনানী কূটনৈতিক জোন থেকে ওই এলাকার সংসদ সদস্য বিএনএফের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টির কার্যালয়ও প্রত্যাহারে দাবি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সংসদ অধিবেশন। কিছু সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আবুল কালাম আজাদের বাগ্বিত-া, হৈ-হট্টগোলের ঘটনাও ঘটে। তবে স্পীকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া আবুল কালাম আজাদের সব অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত বিতর্কে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশদ এরশাদসহ অন্য সংসদ সদস্য অবিলম্বে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নাশকতা-সহিংস রাজনীতির পথ পরিহার করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনসমর্থনহীন সন্ত্রাস-নাশকতার আন্দোলন করে কখনও কোন সরকারকে উৎখাত করা যায় না। সরকার বদলাতে হলে ভোটের মাধ্যমেই করতে হবে। বিএনপি নেত্রী গুলশানের কার্যালয় থেকে নির্দেশ দিয়ে যেভাবে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন, তাতে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে জনগণের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত এ বিতর্কে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। অনির্ধারিত বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাসদের শিরীন আখতার ও বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ। বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করেন। তিনি জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি তো জনগণের ভোট নিয়েই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাই ভোটের রাজনীতি করতে হলে জনগণের স্বার্থ তো দেখতে হবে। ভোটের রাজনীতি করতে চাইলে আপনাকে অনুরোধ করবো এসব বন্ধ করুন। সন্ত্রাস করে কোন সরকারকে উৎখাত করা যায় না। সরকার বদলাতে হলে ভোটের মাধ্যমে করতে হবে। তাই মানুষ পোড়ানো বন্ধ করে জনগণের জন্য কাজ করতে আমি বিএনপি নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা যে কোন মূল্যে হোক বন্ধ করতে হবে। যে কোন পদক্ষেপ নিন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সরকারের পাশে থাকব। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে মানবতা আজ বিপন্ন। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করবে এটাই দেশের মানুষের প্রত্যাশা। রাজনীতির নামে যে সহিংসতা চলছে তাতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে। দেশে যা চলছে তাতে দেশের জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। জনগণের প্রশ্ন- এই হরতাল-অবরোধ কতদিন চলবে? এ হরতাল-অবরোধে দেশের যা ক্ষতি হয়েছে তাতে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। এ ক্ষয়-ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কার? কীভাবে এতো ক্ষতি মেটানো যাবে? রওশন এরশাদ বলেন, হরতাল-অবরোধ গণতান্ত্রিক পন্থা হলেও সেটা এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে জনগণ অতীষ্ঠ হয়ে গেছে। বাসে-গাড়িতে-ট্রেনে পেট্রোলবোমা মেরে প্রায় একশ’ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পোড়া-দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ দেখলে সকলের হৃদয় ভেঙ্গে যাবে। জনগণ কেন রাজনৈতিক কর্মসূচীর প্রতিপক্ষ করা হবে? এ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে ৯১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দেশের। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। দেশের মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও পেট্রোলবোমার আতঙ্ক থেকে মুক্তি চায়। বিদেশী ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অন্য দেশে বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীদের জীবনও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, স্কুলে যেতে পারছে না। হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার একটি উপায় বের করতে হবে। বসে আলোচনা করলে একটি পথ বের হবে। জাতীয় পার্টি এভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশ চলুক তা আমরা চাই না। যেভাবেই হোক এ থেকে দেশকে পরিত্রাণ দিতে হবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, পেট্রোলবোমা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রথম শান্তির মিছিল করেছে জাতীয় পার্টি। সারাদেশের মানুষ একটি শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছে। আমরা এর অবসান চাই। ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না। আমরা সকলে মিলে এমন সন্ত্রাস-সহিংসতার অবসান করতে চাই। ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বড় দেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে, প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের গুলি করে দমন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কেন করা হচ্ছে না? হত্যার রাজনীতি রাজনীতিকে হত্যা করে। খালেদা জিয়া দেশে রাজনীতিকেই হত্যার মিশনে নেমেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেন তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তিনিও আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান এবং তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। জাসদের শিরীন আখতার পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচীতে বোমা হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ মিছিলে বোমা হামলা করা হয়েছে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে যে আগুন সন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বন্ধ করতে হবে। গুলশান থেকে তার কার্যালয় সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনভাবেই নাশকতাকারী ও বোমাবাজদের ক্ষমা করা যাবে না। যারা সংলাপের কথা বলছেন, তারা কী বুঝতে পারছেন না যারা হরতাল-অবরোধ ডাকছে তাদের কারণেই শত মানুষের জীবন চলে গেছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার আগুন সন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। খালেদা জিয়ার আর বাইরে থাকার সুযোগ নেই, অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হোক।
×