ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিছিলে বোমা আহত ১১

নাশকতা বন্ধ না করলে খালেদার রক্ষা নেই ॥ নৌমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নাশকতা বন্ধ না করলে খালেদার রক্ষা নেই ॥ নৌমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধের নামে দেশজুড়ে অব্যাহত সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করেছে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ। পরিষদের আহ্বায়ক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হরতাল ও অবরোধসহ নাশকতা বন্ধে খালেদা জিয়াকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে গুলশান থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। কর্মসূচীর নামে দেশের গরিব শ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ হত্যার অভিযোগ এনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, অবিলম্বে আপনি অবরোধ-হরতাল বন্ধ করুন। নাশকতা বন্ধ করুন। অন্যথায় কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। এদিকে কর্মসূচী চলাকালে মিছিলে কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনীর মাঝে আবারও বোমা হামলা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচীতে সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। গত ৪৩ দিন ধরে বিএনপির অবরোধ-হরতালের মধ্যে এর আগে পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী-অভিভাবক- শিক্ষকরা নাশকতা বন্ধের দাবি জানিয়ে ওই কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এতদিন চেয়ারপার্সন অবরুদ্ধ বলে নানা দাবি করলেও গেল সপ্তাহে বিএনপির উদ্যোগেই কার্যালয়ের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। সোমবার সকালে প্রথমে আওয়ামী মহিলা লীগের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে যান। গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে তাঁদের থামিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা পেয়ে মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। তাঁরা সেখানে মিছিল-সেøাগান দেন। কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তসলিমা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহিদা তারেক দীপ্তি। এরপর গুলশানে ওয়ান্ডারল্যান্ডের সামনে জড়ো হয়ে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী রওনা হন গুলশান-২ নম্বর সেকশনের দিকে। খালেদা জিয়ার কার্যালয় যে রাস্তায়, সেই ৮৬ নম্বর সড়কের মুখে এসে একটি অস্থায়ী মঞ্চে তাঁরা সমাবেশ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যালয়ের বাইরে দুটি ব্যারিকেড দিলেও একটি ভেঙ্গে কার্যালয়ের কাছে চলে আসেন প্রতিবাদকাকীরা। ঘেরাও কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন পরিষদের আহ্বায়ক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। আরও বক্তব্য রাখেনÑ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ, মহাসচিব আবদুল আহাদ মতিন, জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তার এমপি, ঢাকা ১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ এনামুর রহমান প্রমুখ। মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙ্গাতে এসেছি। আপনি হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ খুন করে চলছেন। বোমাবাজি করছেন। চোরাগোপ্তা হামলা করে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক হত্যা করছেন। অবরোধ-হরতালে খুন বন্ধ করুন। আজ আমরা এখানে এসেছি খালেদা জিয়াকে জানান দেয়ার জন্য। এ অবস্থা যতদিন চলবে ততদিন কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। সরকারের উদ্দেশে নৌমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না হলে জনগণই তাঁকে কোলে করে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাবে। সমাবেশে ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমি স্পষ্টভাষায় খালেদা জিয়াকে বলে দিতে চাই, অবিলম্বে আপনি অবরোধ-হরতাল বন্ধ করুন। অন্যথায় কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব, মানুষ হত্যাকারী দানবকে বন্দী করুন। দেশ ও মানুষকে বাঁচান। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না হলে জনগণই তাকে কোলে করে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাবে। কর্মসূচী চলাকালে গুলশানে মিছিলে হাতবোমা হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জঙ্গী-তালেবানরা আজ এক হয়ে দেশে মানুষ হত্যা করছে, পেট্রোলবোমা ছুড়ছে। আজও আমাদের সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা তারা চালিয়েছে। খালেদা জিয়া কতিপয় জঙ্গী ও তালেবান নিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছেন। পাকিস্তানী আইএসআই এজেন্টরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বলে দিতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বেঁচে থাকতে খালেদা জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। জাসদ ও শ্রমিক জোটের নেত্রী শিরিন আক্তার এমপি বলেন, খালেদা জিয়াকে বলতে চাই, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনি অবরোধ-হরতাল তুলে নিন। নইলে আপনি এই কার্যালয়ে থাকতে পারবেন না। এদিকে এই কর্মসূচী চলাকালেই মিছিলে বোমা হামলা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলশানে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝেই হামলা হয়। গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- বাবুল আহমদ (৫৪), মোতালেব হোসেন (২২) ও ওবায়েদুল হক (২১)। ককটেলের স্পিøন্টার বাবুল আহমদের মাথায় ও ডান হাতে এবং মোতালেব ও ওবায়েদুল হকের পায়ে বিদ্ধ হয়। তাঁরা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পূর্ব নির্ধারিত এ কর্মসূচী শুরু হয়। ওই সময়েই হামলার এ ঘটনায় ওই এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করে গুলশান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের বেশিরভাগই নিরীহ বলে দাবি করেন তাঁদের স্বজনরা। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, এ ঘটনায় ছাত্রদলের তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের যে কোন মুহূর্তে আটক করা হবে। পুলিশসহ অন্য গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। জড়িতরা কিছুতেই পার পাবে না। ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী মিছিলে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ নিজে আহত হওয়ার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলটি গুলশান-২ নম্বর মোড়ের মেট্রোপলিটন শপিংমল পার হওয়ার সময় মার্কেটের উপর থেকে ৬-৭টি বোমা ফেলা হয়। নৌমন্ত্রী ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। তিনি মার্কেট পার হয়ে যাওয়ার পর মিছিলের মাঝামাঝি হামলা হয়। হামলার পর মিছিলের লোকজন প্রাণভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় গাড়ি চলাচলও কিছু সময় বন্ধ থাকে। ঘটনাস্থল মেট্রোপলিটন শপিংমলের সামনের রাস্তায় অন্তত তিন জায়গায় রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের পর পরই মার্কেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কর্মসূচী শেষে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যালে যান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরী বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁদের হাসপাতালে রুবেল আহমেদ ও আবু তাহের ইমন নামে দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে গেছেন।
×