ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনের কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হচ্ছে

টেলিফোন ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

টেলিফোন ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করছে সরকার

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করার জন্য সরকার এবার নিজেই বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগের অর্থ যোগাতে সরকার চীন সরকারের কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে। এই টাকায় এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দিয়েছে। চীন সরকারের অর্থ প্রাপ্তির পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিটিসিএল। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড) দেশব্যাপী বিদ্যমান সব এক্সচেঞ্জের পুরনো ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও কপার বেজড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি এবং ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। এজন্য ব্যয় হবে এক হাজার ৮শ’ ৬১ কোটি টাকা। গোটা অর্থের মধ্যে চীন সরকার ঋণ দেবে এক হাজার ৪শ’ ৫৩ কোটি টাকা। বাকি ৪০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে। চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) ও চীনা প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে। বিটিসিএল রাজধানীর এক লাখ পুরনো টেলিফোন ও যন্ত্রপাতিসহ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে ৭১ হাজার নতুন সংযোগ স্থাপন করবে বিটিসিএল। এই প্রকল্পের কাজ কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজধানীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো আধুনিকায়ন করার কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। প্রতিটি এক্সচেঞ্জে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগের আওতায় চলে এসেছে। অল্পকিছু বাকি রয়েছে, যা আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে বলে বিটিসিএল জানিয়েছে। ঢাকার কাজ শেষ হওয়ার পর জেলা ও থানা শহরগুলোর দেড় লাখ পুরনো টেলিফোন প্রতিস্থাপন করা হবে। এই টেলিফোনগুলো প্রতিস্থাপনের পর ৫০ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ দেয়ার সুবিধা তৈরি হবে। এদিকে জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি এ বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৫শ’ কোটি টাকার নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ঝুলে আছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে দাতা সংস্থা জাইকা। জাইকা বিটিসিএলকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে ক্ষোভের কথাও জানিয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ৫০ হাজার টেলিফোন সুবিধা সাড়ে তিনগুণ বেড়ে এক লাখ ৮০ হাজারে উন্নীত হবে। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক গেটওয়েরও (আইজিডব্লিউ) কল আদান-প্রদানে সুবিধা বাড়বে। বিদেশী কলের ইনকামিং ও আউটগোয়িং ক্যাপাসিটিও অনেক বেশি হবে। অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটবে। টেলিফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন, অডিও, ভিডিও এবং ডাটা ট্রান্সফার সব একটি কেবলের মাধ্যমে চলবে। টেলিফোন মনিটরিং সিস্টেমও অনেক উন্নত হতো। ভিওআইপি কল প্রায় বন্ধই হয়ে যেত। অদৃশ্য কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বিটিসিএল। বিটিসিএলর একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য নামমাত্র সুদে জাইকা এই প্রকপ্পে ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকল্পটির অগ্রগতি জানতে চেয়ে বিটিসিএলকে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির জবাব এখন পর্যন্ত দেয়নি বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে বিটিসিএলের ৯ লাখ ৩০ হাজার ল্যান্ডফোন গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরে রয়ে গেছে। এজন্য চীনের অর্থায়নে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ লাখ গ্রাহককে ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ করা হবে বলে বিটিসিএল জানিয়েছে।
×