ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেনা ও বিজিবির অভিযানে বান্দরবানের অরণ্যে পপি চাষ কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সেনা ও বিজিবির অভিযানে বান্দরবানের অরণ্যে পপি চাষ কমছে

মোয়াজ্জেমুল হক, বান্দরবান থেকে ফিরে ॥ মিয়ানমার সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি বান্দরবানের গহিন অরণ্যে সেনা ও বিজিবি সমন্বয়ে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এ অভিযান চলছে। তবে সম্পূর্ণভাবে মাদক তথা পপি, গাঁজা ও আফিম চাষ বন্ধ করা এখনও সম্ভব হয়নি। মাদকবিরোধী কড়া অভিযানের কারণে ইতোপূর্বেকার সময়ের তুলনায় মাদক চাষ হ্রাস পাচ্ছে বলে সেনাবাহিনীর দাবি রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে অতি নিকটবর্তী পাহাড়ঘেরা অরণ্যে মাদক ব্যবসায়ী, মাদক চাষী ও মাদকবিরোধী অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সোমবার বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীদের চট্টগ্রাম থেকে নেয়া হয়েছিল মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থানছি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বে রেমাক্রি ইউনিয়নের পানঝিড়িতে। পানঝিড়ির পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত অস্থায়ী হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার অবতরণের পর মিডিয়াকর্মীরা ৫ পাহাড়ী এলাকার আঁকাবাঁকা দুর্গম রাস্তা হেঁটে অতিক্রম করার পর পৌঁছানো হয় চাষকৃত পপির পাঁচটি মাঠে। উর্ধতন সেনা ও বিজিবি কর্মকর্তা, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে এ পাঁচটি মাঠের পপি ক্ষেত পোড়ানো হয়। এ পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে ২ একরেরও বেশি পপি ক্ষেত ও বীজতলা। সোমবার এককভাবে ধ্বংস করা হয়েছে ১ একেরও বেশি পপি ক্ষেত। এ সময় সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী ও আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। যেখানে ৪ হাজার ৪৭৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বান্দরবান জেলা। এ জেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ী ভূমির বিন্যাস, ঘন সংরক্ষিত বন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর স্থায়ী কোন স্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল স্থানীয় পাহাড়ী সহযোগীদের মাধ্যমে পপি, গাঁজা ও আফিম চাষ করে থাকে। মাদক ব্যবসায়ীদের হুমকির কারণে এবং অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় জনদরিদ্রগোষ্ঠী যাদের মাঝে এখনও রয়েছে আদিম যুগের আদিমতা। তারা জুম চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাদক চাষ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে এলাকার উঠতি বয়সী তরুণ যুবসমাজ মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সীন ও আরাকান স্টেটের নিকটবর্তী বান্দরবানের এসব এলাকায় আরাকান আর্মি, আরাকান লিবারেশন ফোর্স ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সন্ত্রাসী সদস্যদের তৎপরতা বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ মাদক চাষের জন্য উর্বর এলাকা হিসেবে জেলার এসব অংশকে বেছে নিয়ে মাদক চাষে অসহায় হতদরিদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করেই চলেছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর কঠোর তৎপরতার কারণে এ মাদক চাষ নিরুৎসাহিত হয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের পুনর্বাসন ও তাদের সন্তানদের পাঠদানের ব্যবস্থাও দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা প্রথমত বাংলা ভাষা জানে না, বুঝেও না। পাশাপাশি কাদের মাধ্যমে মাদক চাষে বিনিয়োগ আসছে ঐসব গডফাদারদেরও তারা চেনে না, কোনদিন দেখেওনি। ফলে এদের কাছ থেকে গডফাদার বা মূল বিনিয়োগকারীদের পরিচয় উদ্ধার করা কখনও সম্ভব হয় না। বর্তমান চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত দুর্গম লিক্রি, পানঝিড়ি ও শেপুপাড়া এলাকায় ১৭০ শতাংশ পাহাড়ী ঢালুর ছড়া সন্নিহিত এলাকায় মাদক চাষ ধ্বংস করা হয়েছে। নৃগোষ্ঠীর সদস্যা কখনও লোভে, কখনও চাপের মুখে মাদক চাষে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা এলাকাও বদল করে থাকে। এ বছর যেসব মাঠের চাষ ধ্বংস করা হয়েছে। আগামীতে তারা এ স্থানে এ মাদক চাষ করবে না। চলে যাবে আরও গহিন অরণ্যে। অথচ মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। যে স্থান দিয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ অবাধে সীমান্ত পেরিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া করে থাকে। তবে সরকার প্রতিনিয়ত বিওপি বৃদ্ধি করছে। অদূর ভবিষ্যতে এর পরিপূর্ণতা পেলে বান্দরবান জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা মাদক চাষের হাত থেকে রেহাই পাবে বলে বান্দরবান রিজিওনাল কমান্ডার সাংবাদিকদের অবহিত করে।
×