ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের হাতে ॥ ২১ মিসরীয়ের শিরচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আইএসের  হাতে ॥ ২১ মিসরীয়ের শিরচ্ছেদ

ইসলামিক স্টেট রবিবার লিবিয়ায় ২১ মিসরীয় খ্রীস্টানকে শিরñেদ করার দৃশ্য সংবলিত এক ভিডিও প্রকাশ করেছে। খ্রীস্টান দেশগুলোর প্রতি রক্তাক্ষরে লেখা এক বার্তা হিসেবে এ ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে বলে এতে দাবি করা হয়। জঙ্গীরা এসব মিসরীয় শ্রমিককে লিবিয়াতে অপহরণ করেছিল। মিসরীদের সবাই ছিল কপটিক খ্রীস্টান। মিসরের নেতা আবদেল ফাত্তাহ আলসিসি খুনীদের শাস্তি দেয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন। খবর এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরীর দক্ষিণ উপকূলে পশ্চিম লিবিয়ার পাহাড়ী সৈকতে ওই হত্যাকা- ঘটে। আগেকার অনুরূপ ঘটনাগুলোর জায়গা থেকে এ হত্যাকা-ের জায়গাটি ইউরোপের অনেক কাছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ইসলামিক স্টেটের ত্রিপোলিটানিয়া প্রদেশের যোদ্ধা বলে পরিচয়দানকারী মুখোশাধারী ব্যক্তিরা কালো পোশাক পরে তাদের হাতে খঞ্জর নিয়ে সৈকত বরাবর সারিবদ্ধভাবে হেঁটে ক্যামেরার দিকে এগিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে ছিল কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরা হাতবাঁধা বন্দীরা। প্রত্যেক বন্দীর পাশে ছিল একজন মুখোশপরা জঙ্গী। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পূর্ববর্তী ভিডিওতে নিহত বন্দীরা এ ধরনের পোশাক পরা ছিল। বন্দীদেরকে বালুভূমিতে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়। একজন জঙ্গী ইংরেজীতে ক্যামেরার সামনে বক্তৃতা করে। এরপর একযোগে বন্দীদের শিরñেদ করা হয়। লিবিয়ার রাজধানীর সমুদ্র তীরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর তাদের রক্তে সমুদ্রের পানি লাল হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। মূল ঘাতক আমেরিকান উচ্চারণে অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলে। তার কথাগুলো আরবী সাবটাইটেলে অনুবাদ করা হয়। খ্রীস্টান দেশের প্রতি রক্তে লেখা এক বার্তা শিরোনামে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব যোদ্ধা বৃহত্তর ইসলামিক স্টেট গ্রুপের একাংশ মাত্র। সে বোঝতে চায় যে, তারা যে আমেরিকান কমান্ডোদের হাতে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়া এবং তাকে সমুদ্রে কবর দেয়ার ঘটনার প্রতিশোধ নিচ্ছে। সে বলে, যে সাগরে তোমরা শেখ ওসামা বিন লাদেনের লাশ লুকিয়ে রেখেছ, আমরা তোমাদের রক্তে সেই সাগর রঞ্জিত করব বলে আল্লাহর নামে ওয়াদা করছি। এক সাবটাইটেলে আরও বলা হয়, পাঁচ বছর আগে এক কপটিক খ্রীস্টান মহিলাকে নিয়ে সংঘটিত এক সাম্প্রদায়িক বিরোধের প্রতিশোধ নিতেও ওই হত্যাকা- চালানো হয়। ক্যামেলিয়া শেহাতা নামের ঐ মহিলা ছিলেন এক কপটিক খ্রীস্টান ধর্মযাজকের স্ত্রী। তিনি কিছুকালের জন্য নিখোঁজ হন। অনেক মুসলমান মনে করেন, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন বলে তার স্বামী ও গির্জার সদস্যরা তাকে অপহরণ করেছিল। আইএসের ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, অপরাধীদের ঐ হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নিতে কায়রো প্রয়োজনীয় উপায় ও সময় বেছে নেবে। সিরিয়া ও ইরাক থেকে প্রচারিত আগের ভিডিও থেকে এখনকার ভিডিওয়ের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, এ ভিডিওতে বন্দীদের হত্যা করার নৃশংস মুহূর্তগুলো দেখানো হয়। সেখানে লিবিয়ার ত্রিপোলি প্রদেশে কালো পোশাক পরা আটকারীদের হাতে বন্দীদের শিরñেদ হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। মিসর প্রতিশোধ নেবে বলে কপটিক চার্চ আস্থা ব্যক্ত করেছে। মিসরে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। সিসি বলেন, মিসর ও সমগ্র বিশ্ব চরমপন্থী মতবাদ বাস্তবায়ন করছে এমন চরমপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। হোয়াইট হাউস শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে মিসরীয় সরকারের প্রতি সমর্থন এবং নিহতদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। এতে ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত হত্যাকা-ের নিন্দা করে আইএসের বর্বরতার কোন সীমাপরিসীমা নেই বলে মন্তব্য করা হয়। আইএস জঙ্গীরা লিবিয়ায় কয়েকবার হামলা চালানোর কথা দাবি করে। দেশটির তৎকালীন নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির উৎখাতের পর কার্যত কোন সরকারবিহীনই রয়েছে। ওই মিসরীয়দের পূর্ব লিবিয়ার উপকূলবর্তী সিরত শহর থেকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে অপহরণ করা হয়েছিল। পূর্ব লিবিয়া এখন ইসলামপন্থী দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
×