ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ জামায়াত নেতা সুবহানের মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আজ জামায়াত নেতা সুবহানের মামলার রায়

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের মামলার রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের নয়টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখার দীর্ঘ ৭৬ দিন পর এই রায় ঘোষণার দিন ঘোষণা করা হলো। এদিকে রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল ভেতরে ও বাইরে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের রায়টি হবে ট্রাইব্যুনালের ১৬তম রায়। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, আটটি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এটি হবে ট্রাইব্যুনাল-২ এর নবম রায়। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১, সাতটি রায় ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাসহ ১৫টি মামলায় ১৬ জনকে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন ধরনের দ- প্রদান করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২। আব্দুস সুবহানের রায়ের পর আরও একটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ থাকবে। পাশাপাশি দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও নয়টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুস সুবহানের ঘোষণার দিন নির্ধারণের পর প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত, আজ বুধবার রায় ঘোষণা করা হবে। আমরা যুক্তিতর্কে আসামির বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ প্রমাণ করতে সামর্থ্য হয়েছি। যুক্তিতর্কের সময় ট্রাইব্যুনালে আমরা আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়েছি। আশাকরি আমরা কাক্সিক্ষত রায় পাব। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে আব্দুস সুবহানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আবদুস সুবহানকে আটক দেখানোর আদেশ চান আদালতের কাছে। ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয় সুবহানকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে সুবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন তদন্ত সংস্থা। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের নয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর ও ২৪ নবেম্বর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসামি পক্ষে শুনানি করেন সুবহানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। অন্যদিকে ৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। গত ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করেন। গত ১ এপ্রিল সুবহানের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। গত ৭ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মোঃ নূর হোসাইনসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৩১ জন সাক্ষী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষ ও আসামি পক্ষ যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন। যুক্তিতর্কে প্রসিকিউশন পক্ষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুস সুবহানের ভূমিকার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়েছেন। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাবে প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আব্দুস সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও তার হাতে নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধী যে অপরাধ করেছেন তাতে তিনি কোন ক্ষমা পেতে পারেন কি-না সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। একজন অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের (ভিকটিম) ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপরাধীর শাস্তির বিষয়ে সমাজের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং ভবিষ্যতে সমাজকে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন থেকে বিরত রাখার বিষয়টিও যেন বিবেচনায় নেন। এ অপরাধের বিচারের উদ্দেশ কেবল একজন অপরাধীকে শাস্তি দেয়া নয়। সমাজকে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করা থেকে নিরুৎসাহিত করা বা কিংবা বিরত রাখাও এর উদ্দেশ্য।
×