ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইতোমধ্যেই প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছে আট শতাধিক স্থানে

হাইওয়ের আট শ’ স্পটে নাশকতায় জামায়াত শিবির সরাসরি জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হাইওয়ের আট শ’ স্পটে নাশকতায় জামায়াত শিবির সরাসরি জড়িত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মহাসড়কে নাশকতাপ্রবণ ৯৯৩ পয়েন্টের মধ্যে ৮ শতাধিক জায়গায় নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করতে স্পটগুলোকে ঘিরে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট। রাতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে কড়া পাহারা আর চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। দিনের ভাগে প্রায় শতভাগ স্বাভাবিক হয়ে গেছে মহাসড়কে যান চলাচল। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। অবরোধ-হরতালের কারণে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজারের বেশি যান চলাচল করছে। প্রসঙ্গত, নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে টানা অবরোধ ঘোষণা করেন। অবরোধ আর খ- খ- হরতালে সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা শুরু হয়। হামলার প্রধান টার্গেট সাধারণ মানুষ আর যানবাহন। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে একের পর এক পেট্রোলবোমা হামলা হতে থাকে। রবিবার পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতায় ৮৯ জনের মৃত্যু, ১৩ দফায় ট্রেনে হামলা, অন্তত ৫ শতাধিক দগ্ধ, বন্দুকযুদ্ধে ১৯ নাশকতাকারীর মৃত্যু আর প্রায় সোয়া ১১শ’ যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি নাশকতার শিকার হয়েছে মহাসড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন। যার সংখ্যা প্রায় ৮শ’। এরমধ্যে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া পণ্যবাহী বা খালি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক এবং তেলবাহী গাড়িসহ নানা ধরনের যানবাহন রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে মহাসড়কের নাশকতাপ্রবণ ৯৯৩ স্পট চিহ্নিত করা হয়। ২০১৩ সালেও চিহ্নিত ওসব স্পটে জামায়াত-শিবির নাশকতা চালিয়েছিল। এবারের অবরোধ-হরতালেও এসব স্পটেই নাশকতার ঘটনা ঘটছে। স্পটগুলো জামায়াত-শিবিরের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে অবস্থিত। হামলার ধরন এবং সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে হামলাকারীরা জামায়াত-শিবির ও তাদের লোকজন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবরোধ-হরতালে মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি নাশকতা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। অন্তত ৮শ’ স্পটে জামায়াত-শিবির ও তাদের লোকজন নাশকতা চালিয়েছে। বাকি স্পটগুলোতে সম্মিলিতভাবে নাশকতা চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত-শিবির, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অন্যান্য দল ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। দিনের বেলায় মহাসড়কে নাশকতার পরিমাণ একেবারেই কম। রাতেও নাশকতার পরিমাণ কম। তবে আতঙ্ক বেশি। এক থানার নাশকতাকারীরা অন্য থানায় অবস্থান নিয়ে নাশকতা চালাচ্ছে। নাশকতাকারীরা বিভিন্ন বস্তি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা মেস, ছাত্রাবাস, বিএনপি-জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বাড়ি, পরিচয় গোপন রেখে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িসহ বিভিন্ন গোপন আস্তানায় অবস্থান নিচ্ছে। সেখান থেকেই তারা রাতের আঁধারে নাশকতা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, দেশের ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। যানবাহনের মধ্যে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে। সোমবার মহাসড়কে ৫০ হাজার ১৬১ যানবাহন চলাচল করেছে। দিন দিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কড়া নজরদারি, টহল জোরদার, বাড়তি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, সমাজের সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কারণে মহাসড়কে প্রতিদিনই যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বাড়ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, নাশকতাপ্রবণ ৯৯৩ স্পটের মধ্যে আট শতাধিক স্পটে নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কমিউনিটি পুলিশ, বিজিবি, সমাজের নানা শ্রেণী পেশার বিবেকবান ও সচেতন মানুষ এবং নাশকতাবিরোধী শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া স্পটগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষকেও। তারা নাশকতাকারীদের বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোর আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা নাশকতাকারীদের সম্পর্কে গোপন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। তিনি জানান, মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে বাড়তি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে অবস্থান নেয়া হচ্ছে মহাসড়কের লিংক রোডগুলোতে। যাতে লিংকরোড থেকে রাতে কেউ বের হয়ে কেউ চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে না পারে। থাকছে মোটরসাইকেল টহল। মহাসড়কে মোটরসাইকেলে দু’জন বহন একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের ৫০ স্থায়ী আউট পোস্টের মধ্যে পুরোপুরি নির্মিত ২৯টি পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আউট পোস্ট মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চব্বিশ ঘণ্টাই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।
×