ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিরচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শিরচ্ছেদ

ধর্মের নামে অধর্ম আর নৃশংসতার যে বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামক জঙ্গীগোষ্ঠী, তা বিশ্ববিবেককে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। হত্যা, রক্তপাত ঘটানোর যে বীজমন্ত্র তারা ধারণ করে আছে তা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালুর নামে যে কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে তা দিন দিন ব্যাপকহারে বাড়ছে। আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারামসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো এখন আইএসের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ অব্যাহত রেখেছে। সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন তাদের দখলে। লিবিয়ারও কিয়দংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে এসে এবার তারা যে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানও শুরু হয়েছে। জঙ্গীদের নৃশংস হত্যাকা- যে কোন মানুষকেই পীড়িত করে। লিবিয়ায় আইএস জঙ্গীরা ২১ মিসরীয় কপটিক খ্রীস্টান বন্দীর শিরñেদ করেছে। শুধু তাই নয়, সেই হত্যাকা-ের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে তারা। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে জঙ্গীদের এক নেতা উচ্চারণ করেছে, ‘যে সাগরে তোমরা ওসামা বিন লাদেনের লাশ লুকিয়ে রেখেছো আমরা তোমাদের রক্তে সেই সাগর রঞ্জিত করব বলে আল্লাহর নামে ওয়াদা করছি।’ যাদের শিরñেদ করা হয়েছে তারা সবাই মিসরের শ্রমিক। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এই শ্রমিকদের সিরতে শহর থেকে অপহরণ করে আইএস জঙ্গীরা। ভিডিওতে দেখা যায়, পশ্চিম লিবিয়ার পাহাড়ী সৈকতে ওই হত্যাকা- ঘটেÑ যা ইউরোপের তথা ইতালির কাছাকাছি এলাকা। মুখোশধারী জঙ্গীরা কালো পোশাক পরে তাদের হাতে খঞ্জর নিয়ে সমুদ্রসৈকত বরাবর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তাদের সঙ্গে ছিল কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরা হাতবাঁধা বন্দীরা। প্রত্যেক বন্দীর পাশে ছিল একজন মুখোশধারী জঙ্গী। বন্দীদের বালুভূমিতে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়। একযোগে বন্দীদের শিরñেদ করা হয় ত্রিপোলির সমুদ্র তীরে। এরপর তাদের রক্তে সমুদ্রের পানি লাল হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফির উৎখাতের পর দেশটি কার্যত সরকারবিহীনই বলা চলে। পূর্ব লিবিয়া ইসলামী জঙ্গীদের দখলে। নিহতদের স্মরণে মিসর ৭ দিনের জাতীয় শোক পালন করছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট জঙ্গীদের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য তাদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, মিসর তথা সারাবিশ্ব আজ বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত। এসব জঙ্গীগোষ্ঠীর মতাদর্শ এবং লক্ষ্য একই। আইএস নামক জঙ্গী সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ক্রমঅগ্রসরমাণ। যে নামেই প্রতিষ্ঠিত হোক, জঙ্গীদের ধর্ম একটাই, তা হচ্ছে মানুষ হত্যা, সম্পদহানি। বাংলাদেশেও আইএসের অনুকরণে বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে, সম্পদের ক্ষতি করে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এই জঙ্গীরাও দেশের কয়েকটি স্থানে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল ২০১৩ সালে। জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হলে শান্তিপ্রিয় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জঙ্গীরা শান্তির বিরুদ্ধে।
×