ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীরা পালিয়েছে, স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীরা পালিয়েছে, স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ যৌথবাহিনীর তৎপরতায় শিবগঞ্জসহ পুরো জেলায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। সন্ত্রাসের সঙ্গে কোন ধরনের আপোস না করে জিরো টলারেন্স দেখানোর কারণেই এ সাফল্যের উদ্ভব হয়েছে। স্বাভাবিক কর্মকা-ে নিয়োজিত হয়ে যত্রতত্র চলাফেরা করতে পারায় আয়-রোজগারের পথ নতুন করে খুলে গেছে। তারা নির্বিঘেœ সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে বাড়ির কর্তাব্যক্তির বা উপার্জনক্ষম ব্যক্তির বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল সেটাও এখন একেবারে নেই বললেই চলে। সর্বশেষ ১৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার ২৪ ঘণ্টায় এ ধরনের সমাজবিরোধীদের মধ্য থেকে ৩১ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। প্রতিদিনই এদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে জেলার সবচেয়ে ভয়াল বা আতঙ্কের জনপদ হিসেবে চিহ্নিত শিবগঞ্জ কানসাটেই হত্যা ও নাশকতা একেবারে নেই বললেই চলে। গত জানুয়ারি ৩ তারিখ থেকে শিবগঞ্জ সদরসহ এ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে হরতাল-অবরোধের নামে দুটি চিহ্নিত দলের কতিপয় শীর্ষনেতার মদদে চরমপন্থীদের একের পর এক নাশকতা ও হত্যার কারণে একমাত্র ডেঞ্জার জোন হিসেবে শিবগঞ্জ চিহ্নিত হয়ে পড়ে। শিবগঞ্জ পুলিশ কোনভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারায় যৌথবাহিনী প্রথমে একটি ছোটখাটো মিনি অভিযানে নামে মহিদপুরসহ সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামে। গ্রেফতার করে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে। অভিযান শেষ করে আইন প্রয়োগকারীরা জেলা সদরে ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিশোধ নিতে মাঠে নেমে পড়ে সন্ত্রাসীদের দোসররা। এক আওয়ামী লীগ নেতার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। শুরু হয় এলাকাজুড়ে শোকের মাতম। এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচ-ভাবে তৎপর হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় মাঠে নামলে ১৪ ইউনিয়নের বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররা গণহারে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যায়। পুরো শিবগঞ্জ এলাকাটি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন) দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াতের দুর্ভেদ্য দুর্গ হওয়ার কারণে যে কোন কর্মসূচী আসামাত্রই দ্বিগুণ উৎসাহে তারা প্রথমেই অবস্থান করে প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কে। অবস্থান নিয়ে বড় বড় গাছ কাটা থেকে শুরু করে পাকা রাস্তার মধ্যে গর্তের সৃষ্টি করত। বিচ্ছিন্ন করে দিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর সোনামসজিদে আসা পণ্য অভ্যন্তরভাগে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতো বা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে তথাকথিত আন্দোলন শুরু হলে ৫ জানুয়ারি থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো দেশের সঙ্গে। এ ভয়াবহ অবস্থা নিরসনে যৌথবাহিনী মাঠে নেমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ সড়কের একাধিক পয়েন্টসংলগ্ন সন্ত্রাসীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত গ্রাম ও মহল্লাতে অভিযান পরিচালনা করে। লক্ষ্য একটাই সড়ক পথ সন্ত্রাসমুক্ত করা, যাতে যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করতে কিংবা যানবাহন ভাংচুর করতে না পারে। এর বাইরেও বড় লক্ষ্য ছিল সোনামসজিদ স্থলবন্দর সচল করা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ বন্দর সড়কের দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যৌথবাহিনী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মাঠে নামায় পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। ফলে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই যৌথবাহিনীর পাহারায় পরিবহন সেক্টরকে সচল করা হয়। যৌথবাহিনীর মারমুখী অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ সড়কে অবরোধ সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তরা এলাকাছাড়া হলে শুরু হয় ট্রাকের মতো ভারি যানবাহন চলাচল। প্রতিদিন যৌথবাহিনীর পাহারায় সোনামসজিদ থেকে পণ্য ভর্তি তিন শতাধিক ট্রাক গন্তব্যে যাওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে পড়ে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সোনামসজিদ বন্দরের পুরো এলাকা ও পানামার ইয়ার্ডে আমাদানি করা মারামাল দিনের দুটি নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাকভর্তি হয়ে গন্তব্যে যাওয়া শুরু হলে ভারতীয় রফতানিকারকরাও আবার সচল হয়ে ওঠেন। নির্ভয়ে কোন ঝুঁকি ছাড়াই দিনভর ভারত থেকে মহিদপুর বন্দর হয়ে মালামাল আশা শুরু হয়। সোনামসজিদ বন্দরে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চলতা। বন্দর শ্রমিকরাও তাদের কর্মকা-ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। বাড়তে থাকে কাস্টমস রাজস্ব। এমনকি পদ্মা সেতুর জন্য ভারতের পাকুড় থেকে আমদানি করা বিশেষ কালো পাথর নিয়ে সমস্যার মধ্যে ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। রাস্তাতে অবরোধের কারণে পাথরের মজুদে স্থান সঙ্কুলানের সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল। সেই পাথরের মজুদও শেষ হয়ে আসছে। এক কথায় যৌথবাহিনীর তৎপরতায় জেলার কোথাও কোন অবরোধ না থাকায় বা অবরোধকারীদের এলাকাছাড়া করার কারণে পরিবহন সেক্টরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ পথে বাস-মিনিবাস না চললেও জনসাধারণ থেমে নেই। জনমনে বড় ধরনের স্বস্তি ফিরে আসায় বড় পরিবহনের বিকল্প হিসেবে চলাচলকারী টেম্পো, দোলনা, করিমন-নসিমনে চেপে গন্তব্যে যাচ্ছে। পুরো জানুয়ারির অবরোধ তা-বে জেলার সবচেয়ে বড় টোলঘর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ সেতুর আয় কমে এলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে তা আবার বাড়া শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকেও সীমিত আকারে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করছে। এমনকি হরতালের মধ্যে জেলা শহরের দোকানপাট খোলা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শহরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র নিউমার্কেট, সেন্টু মার্কেট ও ক্লাব মার্কেটের দোকানপাট হরতালের মধ্যে খোলা শুরু হয়েছে। প্রধান গেটের অল্প কিছু অংশ খুলে জনসাধারণ যাতায়াত করছে। প্রতিটি মার্কেটের ম্যানেজমেন্ট অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নিরাপত্তার। তাদের মধ্যে ককটেল আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত দিনের বেলায় কোথাও কোন ধরনের বোমাবাজির ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতের বেলায় কোন কোন দিন অজানা স্থান থেকে বিকট শব্দের আওয়াজ এলেও এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর আসেনি। নিউমার্কেট সংলগ্ন বিশাল মাছবাজার ও আড়তেও সকালের দিকে থাকছে উপচেপড়া ভিড়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তে আসছে মাছ। একইভাবে পাইকারী কাঁচাবাজারেও প্রচ- ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অবরোধ-হরতালের মধ্যেও জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দরদাম স্থিতিশীল রয়েছে। পুরো শহরজুড়ে অবরোধ ও হরতালের কোন প্রভাব পড়েনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ জেলার অভ্যন্তর ভাগের যাতায়াত খুবই স্বাভাবিক রয়েছে।
×