ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘কিসোক লাগি হরতাল হোছে কিছুই বুঝবার পারছি না, খ্যাত-খামার লয়ে মরে যাচ্ছি’

হরতালের ফাঁদে চাষী

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হরতালের ফাঁদে চাষী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দীর্ঘ অবরোধ আর মাঝে মাঝে গায়েবি হরতালের ফাঁদে পড়ে রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লোকসানের কবলে পড়েছেন সবজি চাষীরা। দিনের পর দিন মাঠে সবজি রেখে শেষ পর্যন্ত কোন সুরাহা না হওয়ায় বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে কৃষকরা। আলু, টমেটো থেকে শুরু করে শাক-সবজি চাষীদের মধ্যে এখন হতাশার ছাপ। রাজশাহী অঞ্চলে মাঠে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ২ টাকা। তাও কেনার মানুষ নেই। অবরোধের শুরু থেকে মাঠে সবজি রেখে কৃষকরা সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন ফল হয়নি। কৃষকদের পানির দরে সবজি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। বাগমারা উপজেলার মরাবিল এলাকার ফুলকপি চাষী হারুন বলেন, ‘হ্যারে ভাই, কী বিপদ, আমরা তো আর এমপি-মন্ত্রী হমু না। কিসোক লাগি হরতাল-মরতাল হোছে, কিছুই বুঝবার পারছি নে। আমরা যে খ্যাত-খামার লিয়ে মরে যাচ্ছি। কেউ গরিবদের কথা বোলছে না। খ্যাতের ফসল পচে যাছে। অযৌক্তিক এ হরতাল-অবরোধে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দুর্যোগ ভালভাবেই চেপে বসেছে। উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ধরেছে পচন। সময়মতো বাজারজাত না হওয়ায় কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া চাষীরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ট্রাকে-বাসে আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, শিম, কপিসহ নানা প্রকার সবজি রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়। সারাবছর কৃষকরা আশায় থাকেন শীত মৌসুমে শাক-সবজি চাষ করে নগদ টাকা উপার্জনের। আবার এ সব ফসল চাষে অনেকে ধার-দেনা করেছেন। এরপরও আছে কারও কারও ব্যাংক এবং এনজির ঋণ। এসব কৃষকের একমাত্র প্রত্যাশা থাকে শীতের সবজি বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করবেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধে তাদের সব প্রত্যাশা চুরমার করে দিয়েছে। সবজি চাষীরা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচী ও ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে। হরতাল-অবরোধের এতদিন পার হলেও সমাধানে কোন পক্ষেরই উদ্যোগ নেই। এতে গ্রামের কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। স্থানীয় শিক্ষক বলেন, সবক্ষেত্রে সবারই সর্বনাশ হচ্ছে। কৃষকরা যেমন সবজিতে পয়সা পাচ্ছেন না, তেমনি ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, চাষীরা তো বটেই, হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীরাও অসহায়। পণ্য পরিবহন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদেরই এর জের বহন করতে হচ্ছে।
×