ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল ভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকাশনা থেকে সংগ্রহের শেষ সময়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিপুল ভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকাশনা থেকে সংগ্রহের শেষ সময়

মোরসালিন মিজান ॥ বই নিয়ে সবচেয়ে বড় আয়োজন। শুধু দেশে নয়, বাইরের পৃথিবীতেও সুনাম আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। সারাবছর যে পরিমাণ বই প্রকাশিত হয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় এর কয়েক গুণ। বাঙালীর বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে এবারও প্রকাশিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ। প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন প্রকাশনা। সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া মুশকিল। শুধু বাংলা একাডেমির কাছে যেসব নতুন বইয়ের তথ্য জমা পড়েছে সে অনুযায়ী ২২তম দিনে নতুন বইয়ের পরিমাণ ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একাডেমি সূত্র জানায়, রবিবার পর্যন্ত মেলায় এসেছে ৩ হাজার ১৩০টি নতুন বই। সব বই মান বিবেচনায় উত্তীর্ণ হবে না। একেবারে নিম্নমানের বইও আসছে। লেখকের পরিচিতি আর তীব্র আবেগ ছাড়া ওসব বইয়ে কিছু হয়ত পাওয়া যাবে না। তাতে কী? ভাল মান সম্পন্ন বই-ও আছে বিপুল পরিমাণে। গত কয়েকদিন মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশিত বইয়ের বড় একটি অংশ উপন্যাস। আছে গল্প ও কবিতা। এসবের বাইরে মেলায় এসেছে নানা বিষয়ে লেখা বই। একটু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যে কারও চোখে পড়বে, বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন লেখক ও গবেষকরা। কেউ ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁক ঘুরে তুলে এনেছেন টাটকা নতুন উপাদান। কেউ পুরনো ঘেঁটে ভুলটুকু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। রাজনীতি শিল্প সংস্কৃতি অর্থনীতি কোন বিষয়ে বই নেই! সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যে ভরপুর প্রকাশনা। মেলার প্রথম দিন থেকেই যার যার পছন্দ মতো বই খুঁজে নিচ্ছেন পাঠক। রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী কিনছেন। তবে এক ধরনের আলসেমিও দেখা গেছে। অনেকেই পছন্দের বই হাতে নিয়ে দেখেছেন। পরে কিনব বলে চলে গেছেন। কোন কোন পাঠক আজ দু’টি তো কাল একটি কেনার পরিকল্পনায় দিন পার করেছেন। মেলায় আসি আসি করে ২২ দিন কাটিয়ে দিয়েছেনÑ এমন পাঠকও আছে বৈকি! তবে যত দিন যাচ্ছে সময় ফুরিয়ে আসছে। বিশেষ করে অমর একুশের পর বইমেলার শেষ বেলাটি শুরু হয়ে গেছে। আজ সোমবার থেকে হিসাব করলে হাতে আর আছে মাত্র ৬ দিন। চোখের পলকে চলে আসবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পর্দা নামবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার। এ অবস্থায় পাঠকদের জন্য প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। বইপ্রেমী মানুষ মুহূর্তগুলো কাজে লাগাবেন বলে আশা করছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। লেখক প্রকাশকরাও অভিন্ন চাওয়া নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এ প্রসঙ্গে মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা বারোয়ারি মেলা নয়। এটি জ্ঞানের অফুরন্ত ভা-ার বইয়ের মেলা। বায়ান্নর স্মৃতিবিজড়িত মেলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। এখানে সব ধরনের বই আসবে। বিপুল ভা-ার থেকে পছন্দ করে বই কিনবেন পাঠক। এটা অবশ্যই বড় সুযোগ। পাঠককে সেভাবেই ভাবতে হবে। সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। কেবল তখনই সার্থক হবে আয়োজনটি। একই প্রসঙ্গে প্রকাশক ওসমান গনী জনকণ্ঠকে বলেন, অমাদের কাজ ভাল বই প্রকাশ করা। আমরা সে চেষ্টা করে অব্যাহত রেখেছি। তবে বই পাঠকের হাতে না পৌঁছলে সব শ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে। সারা বছরই তাঁদের বই বিক্রি হয় জানালেও তিনি বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমাদের প্রত্যাশা থাকে সবচেয়ে বেশি। মেলার বাকি দিনগুলোতে পাঠক আরও সিরিয়াস হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ২৪০ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২২তম দিনে রবিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ২৪০টি। নজরুল মঞ্চে এদিন ১১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলায় শনিবার পর্যন্ত শুধু বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টল থেকে বিক্রি হয়েছে টাকা। ১ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯শ’ ৫০ টাকা। নজরুল মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ও আবদুশ শাকুর রচিত ২ খ-ের ‘রবীন্দ্রজীবন’ গ্রন্থ বিষয়ে ‘রবীন্দ্রনাথ : মহাজীবনের অঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অধ্যাপক ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সন্জীদা খাতুন। প্রাবন্ধিক বলেন, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংসারিক ও প্রাত্যহিক রবীন্দ্রনাথ উন্নীত হয়ে গেছেন নান্দনিকতায়, বৈশ্বিকতায় করেছেন স্বতিক্রমণ। এই ধরনটি তাঁর জীবনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। জীবনের বিচিত্র ঘাটে-ঘাটে নানা মানুষের অঙ্গ সঙ্গ ও উষ্ণ-তিক্ত সম্পর্ক থেকে তিনি নিষ্কাশন করে নিতেন বিপুল সৃষ্টিকর্মের উৎস-উপাদন ও ভাববৈভব। এ-অর্থেই বলা যায়, এ যেন এক মহাজীবন- নিজ জীবনকে যে পলে-পলে সৃষ্টিমুখর করে তুলেছে। তিনি বলেন, আবদুশ শাকুর প্রণীত রবীন্দ্রজীবন রবীন্দ্রনাথের এইসব জীবনবৈশিষ্ট্য ধারণ করে গবেষকসহ সাধারণ পাঠককে তাঁর সৃষ্টির প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। আলোচকরা বলেন, বাংলা একাডেমি আবদুশ শাকুরকে রবীন্দ্রজীবনী প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়ে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন যদিও আবদুশ শাকুরের অকস্মাৎ প্রয়াণের ফলে এই জীবনীর পূর্ণাঙ্গ অংশ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। পরিকল্পিত চার খ-ের প্রথম দুই খ-ে আবদুশ শাকুর যে গবেষণা-নিষ্ঠা ও দৃষ্টির নতুনতায় রবীন্দ্রজীবনকে ধারণ করেছেন তা বাংলা জীবনীসাহিত্যে একটি নতুন সংযোজন। তারা বলেন, কিছু অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত রবীন্দ্রজীবনী রবীন্দ্র- গবেষণার ধারাকে একটি নতুন মাত্রা দেবে নিঃসন্দেহে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন বলেন, রবীন্দ্রভুবনের বিপুলতা ও বৈচিত্র্য আবদুশ শাকুর তাঁর ‘রবীন্দ্রজীবন’ গ্রন্থে শিল্পদক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। কেবল তথ্য ও তত্ত্বের সমাবেশ নয় বরং জীবনরসিকের দৃষ্টিতে রবীন্দ্রবিশ্বে অবলোকন করেছেন তিনি। আবদুশ শাকুরের মতো আমরাও যদি কেবল জীবনতথ্য দিয়ে নয়; সাহিত্যসৃষ্টির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে দেখি তবে আমাদের সত্যদর্শন ঘটবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ মঞ্চস্থ করে নাটক রাজারবাগ ’৭১। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মোঃ শরিফুল আলম। আজকের আয়োজন ॥ আজ সোমবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘সবুজপত্রের শতবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক সৌভিক রেজা এবং আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ।
×