স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস, জঙ্গী, মাদক, অস্ত্র, চোরাচালান, মানবপাচার ও অর্থপাচার শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা সার্ক অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ধরনের অপরাধকর্ম দিন দিনই ব্যাপকতা পাচ্ছে। এ সব দমন-প্রতিরোধের এখনই সময়। নইলে এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নতি সম্ভব নয়। প্রয়োজনে এ ধরনের অপরাধ দমনে সবাইকে অভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকায় সার্ক দেশগুলোর উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন। সার্ক দেশের পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের তিন সপ্তাহব্যাপী ‘ট্রান্সজশনাল ক্রাইম : সার্ক পারস্পোকটিভ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কোর্স রবিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল একেএম শহীদুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে কোর্সটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী ভাষণে একেএম শহীদুল হক বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম দেশী ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা শুধু তাদের দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ থেকেই সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকা- পরিচালনা করছে না, তাদের রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ নেটওয়ার্ক। সার্ক দেশসমূহের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীগুলো ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম মোকাবেলার জন্য নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ইনফরমেশন, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং এবং মতবিনিময় করতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বাস করে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, ও উন্নতি বৃদ্ধি কল্পে সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাস, ধর্মীয় উগ্রবাদ, মানবপাচার, চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্রের লেনদেন, মাদক চোরাচালান, মানি লন্ডারিং ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম রোধ কল্পে একত্রে কাজ করার সুয়োগ রয়েছে। সেটার ওপর গুরুত্ব দেয়ার এখনই সময়।
ইন্সপেক্টর জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বলেছেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূমিও দেশের কিংবা বাইরের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। গত ছয় বছরে আমরা আমাদের দেশে সন্ত্রাস কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছি। সার্ক দেশসমূহের মধ্যে আমাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ফাতেমা বেগম সার্কভুক্ত দেশসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন- পেশাগত বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতার মনোভাব এবং পুলিশি সেবার সর্বোত্তম অনুশীলন, এসব দেশসমূহের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সামর্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নে এ প্রশিক্ষণ কোর্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ কোসের্র উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ সার্ক অঞ্চলে বহুজাতিক অপরাধ মোকাবেলা, প্রচলিত পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সার্ক পুলিশি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম পুলিশি সেবার অনুশীলন সম্পর্কে মতবিনিময়সহ অন্যান্য বিষয়ে সম্যক ধারণা প্রদান করা। বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত এটি তৃতীয় প্রশিক্ষণ কোর্স। প্রশিক্ষণ কোর্সটিতে আফগানিস্তানের ২ জন, ভুটানের ২ জন, শ্রীলঙ্কার ২ জন, মালদ্বীপের ২ জন, ভারতের ২ জন, নেপালের ১ জন এবং বাংলাদেশের ৯ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন।
পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ফাতেমা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।