ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্থিরতার ধকল কাটিয়ে উঠছে বৈদেশিক সহায়তা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অস্থিরতার ধকল কাটিয়ে উঠছে বৈদেশিক সহায়তা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বৈদেশিক অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি উভয়ই বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক মাস প্রতিশ্রুতি কমলেও সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সরকার। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারী সম্পদ ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরকারী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, নতুন নতুন দাতাদেশ যুক্ত হওয়া এবং বাংলাদেশে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা দাতাদের বোঝাতে পারার কারণেই বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল সে আশঙ্কা কেটে গেছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের তৎপরতা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সফল নেগোশিয়েশনের ফলেই উন্নয়নসহযোগীদের আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে ইআরডি। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে দাতারা অর্থছাড় করেছে মোট ১৭৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৪০ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার এবং অনুদান ৩৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১২৫ কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৩০ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে। প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে দাতারা বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত দিয়েছে ২০৬ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ হচ্ছে ১৭৬ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৩০ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ সাত মাসে দাতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ১৫৪ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১২৬ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদান ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দাতাদের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এখনও সরাসরি বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে পড়েনি বলেই সাত মাসে বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাংকের কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে যে ঘাটতি ছিল তা পূরণ হয়েছে। অন্যদিকে গত সাত মাসে বাংলাদেশ দাতাদের ঋণ পরিশোধ করেছে মোট ৭১ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৬০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ হচ্ছে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ সাত মাসে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ৭১ কোটি ৮২ লাখ ৮০হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৫৯ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ১২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দাতাদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড়কারী সংস্থাগুলো হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ঋণ ৪৩ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ১০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড় করেছে ৫০ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান।
×