ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবারও লঞ্চডুবি, আরও মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আবারও লঞ্চডুবি, আরও মৃত্যু

আবারও পদ্মায় ডুবেছে লঞ্চ। অকালে ঝরে গেল ৭২টি প্রাণ। নিহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ডুবে যাওয়ার ২০ ঘণ্টা পর লঞ্চটি উদ্ধার করে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। এখনও নিখোঁজ কয়েকজন। শনাক্ত হওয়া লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনের কাছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার বেলা ১২টায়। পাটুরিয়াঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় পদ্মা পারাপারের লঞ্চ এমএল মোস্তফা-৩। যাত্রার ১০ মিনিটের মাথায় মাঝনদীতে দুর্ঘটনায় পড়ে লঞ্চটি। জানা গেছে, নগরবাড়ী থেকে ঢাকাগামী কার্গোজাহাজ এমভি নার্গিস-১ ধাক্কা দেয় লঞ্চটির মাঝামাঝি অংশে। এতে লঞ্চটি কাত হয়ে ডুবে যায়। লঞ্চডুবির পরপরই স্থানীয় লোকজন নৌকা ও ট্রলার নিয়ে শুরু করে উদ্ধারকাজ। এ সময় বেশকিছু যাত্রী সাঁতরে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়। পরে বিআইডব্লিউটিএ’র টাগবোটের মাধ্যমে লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম যোগ দেয় অভিযানে। উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করার পরেও স্থানীয় প্রশাসন ও ডুবুরিরা ট্রলার নিয়ে নদীতে তল্লাশি চালায়। ওই লঞ্চে ঠিক কত আরোহী ছিলেন তার সঠিক হিসাব জানাতে পারেনি কেউই। চালকদের অদক্ষতা আর প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে যথারীতি তদন্ত কমিটি করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। তবে সাধারণত এসব তদন্তের রিপোর্ট বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখে না। যেসব তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেসবের চেহারা প্রায় একই রকম। সেই অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ বা ফিটনেসবিহীন যান, নির্মাণ ত্রুটি, ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ কিংবা মাল বহন ইত্যাদি ইত্যাদি। দুর্ঘটনা এড়াতে অতীত দুর্ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। কিন্তু তার কতখানিই বা বাস্তবায়িত হয়। সড়কপথের মতো নৌপথটিও যেন অবহেলিত। সেখানে নেই সিগন্যালের তেমন কোন ব্যবস্থা। নেই পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জামের ব্যবস্থাও। উদ্ধারকারী যান আসে ধীরলয়ে। দেশের যোগাযোগ, যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় একটা মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষেত্রে। অবশ্য এখন জলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলেও এই ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থা খুব উন্নত, বলা যাবে না। নৌপথে বড় জাহাজ ছাড়াও ছোট ছোট প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। এসবের প্রায় কোনটাই নৌপথের জন্য নিরাপদ নয়। বহু ক্ষেত্রেই নিয়ম নীতি মানা হয় না। অধিক মাল ও যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। যথাযথ তদারকি না করলে আইনবিধি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। নৌপথের যাত্রা নির্বিঘœ করতে হবে। অগণিত মানুষের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠু ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে এ পথটির দিকে নজর দিতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
×