ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেলা শেষের বেলা ভাঙনের সুর, নানা হিসেব নিকেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মেলা শেষের বেলা ভাঙনের সুর, নানা হিসেব নিকেশ

মোরসালিন মিজান ------------------ এক মাসের মেলা। দীর্ঘ এক মাস। অথচ চোখের পলকেই শেষ। শেষ মানে, শেষের পথে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ বুধবার ২৫তম দিন। আর মাত্র তিন দিনের মেলা অবশিষ্ট রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার পর্দা নামবে বাঙালীর বৃহত সাংস্কৃতিক উৎসবের। এখন তাই ভাঙনের সুর। শেষ বেলায় বিক্রি বাড়লেও, আছে নানা অভাব অভিযোগ। বিদগ্ধ পাঠকের চাহিদা যা, প্রাপ্তি তার তুলনায় কম। প্রকাশকরাও নানা ইস্যুতে মুখ খুলছেন। আয়োজক বাংলা একাডেমির দুর্বলতারও কোন শেষ নেই। বলা চলে, ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই মেলা শেষের বেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর এখন সর্বত্র ভাঙনের সুর। অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য নতুন বই আসা শেষ হয়েছে। ছাপাখানা কিংবা অফিসে আগের ব্যস্ততা নেই। প্রকাশকরা লম্বা সময় মেলায় উপস্থিত থাকছেন। শেষ সময় হওয়ায় বইপ্রেমী মানুষ পছন্দের বই সংগ্রহে আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। মঙ্গলবার বিকেলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য’র সামনে কথা হয় আশরাফুল আলম নামের এক মাঝবয়সী পাঠকের সঙ্গে। সব মিলিয়ে কেমন হলো এবারের আয়োজন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গাটা বড়। এটা ভাল হয়েছে। এখন বই দেখা যায়। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে দেড় দু’ পাতা পড়ে ফেলা যায়। মেলায় এমন সুযোগ থাকার দরকার আছে। এবার প্রচুর নতুন বই চোখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিচিত্র বিষয়ে লেখা এসব বই থেকে আমি আমার পছন্দেরগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। কিছু বিষয় হয়ত মনে মনে ছিল। কিন্তু এসব বিষয়ের ওপর বই পাব ভাবিনি। তেমন বইও পেয়ে গেছি মেলা ঘুরে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষার্থী রিশিতা কিছুটা বিরক্ত মনে হলো। বললেন, মেলায় নতুন বই বলতে তো আনিসুল হক, সুমন্ত আসলাম বা ইমদাদুল হক মিলনের ন্যাকা ন্যাকা উপন্যাস শুধু। ছোটদেরও ওই জাফর ইকবাল স্যার পর্যন্ত গন্তব্য। এসবের বাইরে অনেক বিখ্যাত লেখকের বই পাওয়া যাচ্ছে বটে। এগুলোর বেশির ভাগই পত্রিকায় ছাপা হওয়া। আগেই পড়েছি। কিছু বই নতুন মলাটে এসেছে। কোন কোন লেখক আবার এক দুই পাতা যোগ বা বিয়োগ করে চালিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রকাশনার মান উন্নত করার পরামর্শ দেন তিনি। প্রকাশকদেরও মেলা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। বড় প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় বিক্রি ভাল। বাকিরা হতাশ। বিক্রি ভাল হওয়ায় সন্তুষ্টির কথাই জানালেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাওলা’র কর্ণধার আহমেদ মাহমুদুল হক। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা তো বহুদিন ধরে আছি। এ সময়ের মধ্যে পাঠকের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়েছে। এ কারণেই আমাদের বিক্রি নিয়ে ভাবতে হয় না। অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে বিভাস’র কর্ণধার রামশংকর দেবনাথ বলেন, এবার রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ। এর প্রভাব পড়েছে মেলায়। এছাড়া স্টল বিন্যাসের ত্রুটির কারণে ভাল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়া প্রকাশকরা বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে চিঠি দিয়েছেন। মেলার সময় বাড়ানোরও দাবি তোলা হয়েছে। এভাবে নানা মত, তর্ক বিতর্ক ও বিশ্লেষণ জোরালো হচ্ছে। ৮৩ নতুন বই ॥ মেলার শেষ দিকে এসে নতুন বইয়ের সংখ্যা কমেছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিনে মঙ্গলবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৩টি। নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন ॥ নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার ৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন প্রকাশিত ড. নাশিদ কামালের প্রবন্ধ সংকলন ‘ঞযব এধৎফবহ ড়ভ ঊৎৎড়ৎং’ ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কবিতার বই ‘ডরহমং ড়ভ ডরহফং’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, ডাঃ মুহিত কামাল, কথাসাহিত্যিক আতা সরকার, প্রফেসর হারুনুজ্জামান, ড. নাশিদ কামাল, গবেষক জয়নাল হোসেন, ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া, প্রিন্সিপাল আবদুল কাদের, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, রমা ইসলাম প্রমুখ। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ৬৪ জেলাভিত্তিক ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মাহবুবুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা এবং অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার লোকজ সংস্কৃতির উপাদান সমৃদ্ধ যে গ্রন্থমালা প্রকাশ করে চলেছে তা আমাদের ফোকলোর চর্চার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। সেকেলে ধারণার বদলে সাম্প্রতিক তত্ত্ব ও ধারণার আলোকে ফোকলোর চর্চাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিবিড় মাঠকর্মনির্ভর ফোকলোর চর্চার এ এক নতুন ধারা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ফোকলোর-ঐতিহ্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরার সযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এই গ্রন্থমালার মধ্য দিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিম-লে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে গভীরভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হবে। আলোচকরা বলেন, নানান আঙ্গিক থেকে লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালাকে বিবেচনা করা যায়। এক্ষেত্রে জেন্ডার ইস্যু, শ্রেণিবিভাজন, সমাজ-গবেষণা এবং সমাজ-রাষ্ট্রের দ্রুত সংঘটিত বিবর্তনকে আলোচনায় রাখতে হবে। তাঁরা বলেন, বাংলা একাডেমির লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা ফোকলোরের আধুনিক চিন্তা ও রীতিপদ্ধতি ধারণ করে সারাদেশের সর্বশেষ ফোকলোর-পরিস্থিতি পাঠকের কাছে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। সভাপতির বক্তব্যে ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি দেশের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ সাধন করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ফোকলোর উপাদানের সামগ্রিক চেহারা স্বদেশ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যাবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ ও শাহাদাৎ হোসেন। ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’ এবং ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন-এর শিল্পীদের পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সরদার মোঃ রহমাতুল্লা, বীনা মজুমদার, সমির বাউল, সাধনা মিত্র, মোঃ আনোয়ার হোসেন, এ. এফ. এম. জহিরুল হক চৌধুরী, আসলাম মিঞা, সুচরিতা রায়, যাবীন তাসনিম শুভ্রা এবং রিদওয়ান আফরিন। আজকের অনুষ্ঠান ॥ আজ বুধবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বদিউর রহমান, পূরবী বসু এবং জাকির তালুকদার। সভাপতিত্ব করবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
×