ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জব্বারের দণ্ড প্রত্যাখ্যান করে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জব্বারের দণ্ড প্রত্যাখ্যান করে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করা থেকে শুরু করে নিরীহ মানুষকে হত্যা, ধর্মান্তরকরণ, গণহত্যাসহ ৫টি অভিযোগের সবকটিই প্রমাণিত হওয়ার পরেও বয়সের বিবেচনায় য্দ্ধুাপরাধী আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদ-ের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। এ রায় অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপীলের দাবি জানান তিনি। এদিকে এ রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি প্রসিকিউশনের। পিরোজপুরে জব্বারের গ্রামের মানুষ এ রায়ের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে রায়ের প্রতিবাদে সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে বিকেলে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ফের জড়ো হন মঞ্চের কর্মীরা। এ সময় তারা অবস্থান কর্মসূচীসহ মশাল মিছিল করে। মঙ্গলবার দুপুরে রায়ের খবর শাহবাগে আসা মাত্রই ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মঞ্চের কর্মীরা। তারা রায় প্রত্যাখ্যান করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধী জব্বারের গুরুপাপের এ লঘুদণ্ড অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রত্যাশিত। দেশবাসী এ রায় আশা করেনি। সকলের প্রত্যাশা ছিল এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- হবে। আব্দুল জব্বারের মৃত্যুদ-ের দাবিতে ১১টা প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নেয় প্রজন্ম সেনারা। ইমরান এইচ সরকার বলেন, এর আগে আব্দুস সুবহানের রায়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বর্তমান বয়স বিবেচ্য বিষয় নয়। পূর্ববর্তী রায়গুলো থেকে এটি নিশ্চিত যে বয়সের বিবেচনায় যুদ্ধাপরাধীরা তাদের অপরাধের দ- থেকে মাফ পাবে না। তিনি বলেন, আব্দুল জব্বারের রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যৌক্তিক ছিল, কিন্তু তা নেয়া হয়নি। এ কারণেই এ অপ্রত্যাশিত রায় দেয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার বয়স বিবেচনায় কাউকে ছেড়ে দেননি। একটি গ্রামের আবালবৃদ্ধাবণিতা সবাইকে তিনি হত্যা করেছেন। ৪৩ বছর পর শুরু হওয়া এ বিচারের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও নির্যাতিত মানুষের দায়মুক্তি উল্লেখ করে ইমরান বলেন, যদি কোন যুদ্ধাপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরেও তাকে লঘুদণ্ড দেয়া হয় তাহলে কোনভাবেই সেই দায়মুক্তি সম্ভব নয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে আব্দুল জব্বারের সর্বোচ্চ দ- নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি। দুপুরে রায় প্রত্যাখ্যান করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে টিএসসি ঘুরে শাহবাগে এসে শেষ হয়। প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুদণ্ড ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুল জব্বারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউশন বলেছে, প্রত্যাশা মৃত্যুদণ্ড থাকলেও আদালতের এ রায়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাহিদ ইমাম বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুদণ্ডৈ। পিরোজপুরে অসন্তোষ ॥ মুক্তিযুদ্ধকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় শুনে হতাশা প্রকাশ করেছেন তার নিজের এলাকা সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাছিড়া গ্রামের মানুষ। এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি প্রত্যাশা ছিল বলে জানিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেখানে নির্যাতিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। জব্বারের মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার দাস বাচ্চু বলেন, কেউই এ রায় সহজে মেনে নিতে পারেনি। প্রতিক্রিয়া নেই জাতীয় পার্টির ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাতীয় পার্টির নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি জাতীয় পার্টি। দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে আব্দুল জব্বার এখন জাতীয় পার্টির কেউ নন।
×