ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে আলোচনা দাবি

খালেদাকে অবিলম্বে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদাকে অবিলম্বে গ্রেফতার

সংসদ রিপোর্টার ॥ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসীরাই শুধু নন, সুশীল নামক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরাও ধরা পড়তে শুরু করেছে। সুশীল বাবুরা আসলে কী চান, মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যেই সেই থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। সব ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। শতাধিক পোড়া মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না, হবেও না। কঠোরভাবেই এসব সন্ত্রাসীদের দমন করেই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের এ বি তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, এ কে এম শামীম ওসমান, বজলুল হক হারুন, মোঃ মনিরুল ইসলাম, আবু সালেহ মোঃ সাঈদ, ঊষাতন তালুকদার, ডাঃ হাবিব এ মিল্লাত, শওকত হাছানুর রহমান ইমন, জাসদের শিরীন আখতার ও জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম প্রমুখ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ওপর নির্যাতন চালায়। ক্ষমতার বাইরে গেলেও জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতায় বসায় জনগণ। এখন ক্ষমতায় যেতে না পেরে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে মান্না সাহেবরা ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, কোনদিন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না পেলেও জাতীয় পার্টি কখনও নির্বাচন বর্জন করেনি। কিন্তু নির্বাচনে না এসে একটি দল দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। বিএনপির আন্দোলন গণতান্ত্রিক নয়, বরং মানুষ হত্যার কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সম্ভব নয়। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর নেই। তাই নির্বাচন নিয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী। সরকারী দলের এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, খালেদা জিয়া এখন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি এখন সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী নেত্রী হিসেবে জাতীয় লজ্জায় পরিণত হয়েছেন। ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে কথিত সুশীল মাহমুদুর রহমান মান্না ধরা পড়েছেন। সাদেক হোসেন খোকার বিরোধীরা বলছেন, খোকাই নাকি ওই রেকর্ড প্রকাশ করে মান্নার মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেনরা নিজেদেরকে সুশীল বলেন। অথচ খালেদা জিয়া, সাইফুর রহমানের মতো ড. কামাল হোসেনও জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। উনি আবার আমাদের নীতিবাক্য শেখান। নীতি শেখানোর আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিয়ে ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এটা জিয়াউর রহমানের সেনাবাহিনী নয়। তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আর শতাধিক পোড়া মানুষের রক্ত মারিয়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গী নেত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনা কখনও সংলাপ করতে পারেন না। জাসদের শিরীন আখতার বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সহিংসতার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছেন। বিএনপি নেত্রী উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, শান্তি পছন্দ করেন না, উনি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ পছন্দ করেন। তালেবানী-আইএস জঙ্গীবাদীতে বিশ্বাস করেন। সুশীলরা কী চান, সেই থলের বিড়াল বের হয়ে পড়েছে মান্নার কথায়। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে নাশকতা-সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান তিনি। সরকারী দলের এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসী ও খুনী খালেদা জিয়া একশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করতে না পারা, হাওয়া ভবন খুলে ছেলেকে দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়তে না পারার যন্ত্রণা থেকেই খালেদা জিয়া গোটা দেশকেই জ্বালিয়ে দিতে চাইছেন। কঠোর আইন প্রণয়ন করে খালেদা জিয়ার দেশের অস্তিত্ববিনাশী অপতৎপরতাকে দমন ও চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে হবে। হাবিব-এ-মিল্লাতও অবিলম্বে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, বিএনপি কোন জনসমর্থিত দল নয়, এটি সন্ত্রাসীদের দল। সন্ত্রাসীদের দল কখনো টেকেনি, বিএনপিও টিকবে না। পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের সমর্থন নিতে হবে। বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। তিনি বলেন, নিজের নাতি-নাতনিদের লেখা পড়ার জন্য মালয়েশিয়া পাঠাবেন. আর হরতাল অবরোধ দিয়ে দেশের ছোট্ট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করবেন, জনগণ এটা মেনে নেবে না। বজলুল হক হারুন বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর কেন এই অত্যাচার? কেন তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে? যারা এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গী গোষ্ঠীর হিংস্র ছোবলে মানুষ আজ দিশেহারা। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিহত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যমের সফরকে ইতিবাচক দাবি করে আবু সালেহ মোঃ সাঈদ বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিস্তা পানি সমস্যাসহ দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। যার মাধ্যমে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
×