ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বড় ইনিংস খেলতে চান উইন্ডিজ তারকা ক্রিস গেইল

ভক্তদের আনন্দ দিতে পেরে ভাল লাগছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভক্তদের আনন্দ দিতে পেরে ভাল লাগছে

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপের ইতিহাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২১৫ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস খেলা ক্রিস গেইল বলেছেন, ভক্তদের আনন্দ দিতে পেরেই ভাল লাগছে তার। একই সঙ্গে শুক্রবার বড় প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও একটি বড় ইনিংস খেলার প্রত্যয় ঝড়েছে ৩৫ বছর বয়সী জ্যামাইকান তারকার কণ্ঠে। ওয়ানডেতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার দু-দুটি ডাবল সেঞ্চুরি তাকে এমন কীর্তি গড়তে অনুপ্রাণিত করেছেন বলেও জানান গেইল। ‘আমার ওপর অনেক চাপ ছিল। রান আসছিল না ব্যাটে। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো এত মানুষ আমার ব্যাটে রান দেখতে চেয়েছে। টুইটারে বার্তার পর বার্তা আসছিল। সবাই চেয়েছিল আমি পারফর্ম করি। আনন্দিত যে তাদের উল্লাস করার মতো কিছু দিতে পেরেছি।’ বলেন গেইল। সময়টা আসলেই খারাপ যাচ্ছিল গেইলের। আগের সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ২০ ম্যাচ আগে, এ সময়ে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ হয়ে মূল লড়াই পর্যন্তÑ শেষ নয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ৪১। বাকি আট ইনিংসে স্কোরÑ ১৯, ১, ১০, ০, ০, ১, ৩৬ ও ৪! সুতরাং চাপের বিষয়টি অমুলক নয়। গেইলের মতো একজনের এটা মানায় না। সেই চাপ জয় করে ফর্মে ফিরলেন রেকর্ড গড়ে। ১৪৭ বলে ১০ চার ও ১৬ ছক্কায় ২১৫ রান করে আউট হন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটাই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ঘটনা ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল গ্যারি কার্স্টেনের। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রাওয়ালপিন্ডিতে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান। ক্যানবেরায় ম্যাচের নায়ক গেইলের ইতিহাসের দিনে তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজও পায় ৭৩ রানের বড় জয়। সম্প্রতি কঠিন সময়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন থেকে সার্কেলের ভেতর চার ফিল্ডার নিয়ম চালু করা হয়েছে তারপর সম্ভবত আমি মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলাম! এই সময়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করা সহজ হয়ে গিয়েছে। আত্মবিশ্বাস ছিল। আগেও বলেছিলাম, যদি আমি ১শ’ পার করতে পারি তাহলে নিশ্চিতভাবেই চেষ্টা করব সেটাকে আরও বড় কিছু করার। ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরে অনেক আনন্দিত। রোহিত শর্মার একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির পর অনেক ভক্ত এই নিয়ে আমাকে টুইট করেছেন। সবাই চেয়েছেন আমিও যাতে তা করি। আমি অনেক খুশি যে সেই চাওয়া পূরণ করতে পেরেছি।’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি ইনজুরিকেই সামনে টেনে আনেন। ‘এ সময়ে ইনজুরি ও এমন আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে সংগ্রাম করেছি। তবে সবসময় চেয়েছি অনুশীলন করে নিজের সেরাটা ফিরে পেতে কিন্তু আমাকে এখানেও কিছু শৃঙ্খলায় আটকে দেয়া হয়েছে। এটা অনেক কঠিন ছিল।’ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া আত্মবিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বয়ে নিয়ে যেতে চান গেইল। ‘আমি আসলেই অনেক খুশি। আমি চাই সবাই এর ওপর ভর করে ভাল কিছু করি। এর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের জন্য দারুণ কিছু করার প্রেরণা দল সংগ্রহ করতে পারবে এবং ওই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গরুত্বপূর্র্ণ। ডাবল সেঞ্চুরি প্রতিদিন আসে না। আমার লক্ষ্য থাকবে দলকে বড় সংগ্রহের পথে ভাল কিছু উপহার দেয়া। এ নিয়ে পাকিস্তান ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচেই আমরা তিন শ’র ওপরে রান তুলেছি, এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।’ ফর্মে ফিরতে মরিয়া ভাবটা গেইলের রেকর্ড ইনিংসেও ছিল স্পষ্ট। হাফ সেঞ্চুরি ৫১ বলে, ৪ চার ও ২ ছক্কায়। ১০৫ বলে সেঞ্চুরি পূরণের পথে চার ও ছক্কা ৫টি করে। ২১৫ রানে শেষ করেন ১৪৭ বলে! ১০০ থেকে ২০০ রানে পৌঁছাতে বল খেলেন মাত্র ৩৩টি, ১৩৮ বলে গড়েন দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ডও। ১৬ ছক্কাÑ এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রোহিত শর্মার সঙ্গে যৌথ রেকর্ড। বিশ্বকাপে ও ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার অনুভূতি জানিয়ে গেইল বলেন, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। রান করা নিয়ে আমি অবশ্যই চাপে ছিলাম। প্রচুর টুইট পেয়েছি। জীবনে আর কখনই এতটা চাপ আসেনি। প্রথম দিকে তাই আস্তে আস্তে শুরু করেছিলাম, কারণ বলটা নিচু হচ্ছিল। আমি সামলে যেতে চেয়েছি, মনে মনে ভেবেছি টিকতে হবে। তারপর এক একজন করে বোলারকে টার্গেট করি। আফসোস যদিও শেষ বলে আউট হয়ে যাই!’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভাল করাটা গেইলের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জ। একে তো রেকর্ড গড়ে ফর্মে ফিরেছেন। তার ওপর বিশ্বকাপের আগে গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডেতে তাকে গর্তে ঢুকিয়ে রেখেছিল প্রোটিয়ারা। বড় সমালোচনাটা তো তখনই হয়েছিল। সফরে পাঁচ ওয়ানডেতে তার রান ছিল ৪১, ১৯, ১, ১০ ও ০!
×