ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৫ সিরীয় খ্রিস্টানকে অপহরণ

ফের আইএসের নৃশংসতা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ফের আইএসের নৃশংসতা

সিরিয়ায় নৃশংস গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেশটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যের মিলনস্থল। বিভিন্ন ধর্মের আরব, কুর্দি, আর্মেনীয়, এ্যাসিরীয়, খ্রিস্টান ও অন্যরা বেশ স্থিতিশীল সিরীয় জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করে পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করত। কিন্তু সিরীয় সংঘাতের ক্রমশ সাম্প্রদায়িক রূপলাভ এবং ইসলামিক স্টেটের উত্থান সিরীয় সমাজের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করে দিতে উদ্যত হয়েছে। -ইয়াহু নিউজ। প্রতিবেশী ইরাকে জঙ্গীদের ধ্বংসলীলা খ্রিস্টানসহ হাজার হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। গত বছর বাগদাদের শীর্ষ খ্রিস্টান ধর্মযাজক বর্তমান মুহূর্তকে ত্রয়োদশ শতকের মোঙ্গল দস্যুদের ভয়াবহ আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেন। এ আক্রমণে অঞ্চলটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং এর রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যায়। মঙ্গলবার সকালে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধারা উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার হাসাকাহ শহরের কাছে গ্রামগুলোতে বসবাসরত বহুসংখ্যক খ্রিস্টানকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তাদের সংখ্যা অন্তত ১৫০ জন বলে কোন কোন খবরে উল্লেখ করা হয়। সীমাহীন নৃশংসতাপূর্ণ সিরীয় সংঘাতে ওই ঘটনাটি এর সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িক প্রকৃতির কারণেই ভীতিকর। অপহৃত ব্যক্তিরা ক্ষয়িষ্ণু এ্যাসিরীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত। এ সম্প্রদায় কয়েক শতাব্দী ধরে ইরাক সীমান্ত বরাবর হাসাকাহ ও নিনেভেহ প্রদেশকে নিজেদের আবাসভূমি বলে গণ্য করে এসেছে। এ্যাসিরীয় খ্রিস্টানরা আরামাইক ভাষায় কথা বলে। যিশুখ্রিস্ট এ ভাষায় কথা বলতেন বলে মনে করা হয়। ইসলামিক স্টেট জিম্মিদের প্রতি নৃশংস আচরণের জন্য কুখ্যাত। চলতি মাসে এ জঙ্গী দলটির লিবীয় শাখা ২১ মিসরীয় কপ্টিক খ্রিস্টানকে হত্যা করে। গতবছর ইরাকী শহর এবং নিনেভেহ প্রদেশের রাজধানী মসুল দখল করার পর জঙ্গীরা ইউনুস নবীর স্মৃতিসৌধসহ খ্রিস্টান কবর ও ধর্মীয় স্থানগুলো ধ্বংস করে। এ্যাসিরীয় জিম্মিদের চলমান সংঘর্ষে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জিম্মিদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রয়েছে। ইসলামিক স্টেট সিরিয়ার এ গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তসীমায় কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ্যাসিরীয় খ্রিস্টান যোদ্ধা এবং নির্যাতিত ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা কুর্দিদের সহায়তা করছে। খ্রিস্টানরা সিরিয়ার জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৬ থেকে ৭ ভাগ। বিবিসির মতে, সিরিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার এ্যাসিরীয় খ্রিস্টান ছিল, কিন্তু এ সংখ্যা এখন কমে গিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বে এ্যাসিরীয় সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোকজনই তাদের মূল আবাসভূমি ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বসবাস করছে। সিরিয়ার বহুবিধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় চলমান সংঘর্ষে কোন পক্ষকেই এক যোগে সমর্থন করেনি। কিন্তু তারা দেশের বিধিত্বের ঐতিহ্য রক্ষা জোরালোভাবে সমর্থন করেছে। গতবছর সিরীয় খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের এক প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তারা খ্রিস্টান উপাসনালয়গুলোর ওপর জঙ্গীদের হামলার নিন্দা করেন এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে উগ্রপন্থী বিদেশী যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ব্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন। দৃশ্যত ধর্মনিরপেক্ষ স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ নিজেকে সিরিয়ার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অন্যতম রক্ষক বলে তুলে ধরেন। ইসলামিক স্টেটের নৃশংস তৎপরতা আসাদের দাবিকে সমর্থন যোগায়। যারা শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা করেন এমন খ্রিস্টানদের মধ্যেও বিদ্রোহী বাহিনী নিয়ে প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। হোমস শহরের শাসকবিরোধী এক খ্রিস্টান ব্যক্তি বলেন, আপনারা কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারেন না। তিনি বলেন, হোমস আর হোমস নেই। তিনি সিরিয়ানদের ওপর জরিপ চালাচ্ছিলেন এমন একদল গবেষকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। জরিপটি গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়।
×