ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪০ হাজার কোটি টাকার চীনা সহায়তা আসছে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

৪০ হাজার কোটি টাকার চীনা সহায়তা আসছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা (৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এর আগে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পরিমাণ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রস্তাবে দেশটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে জানান, আমরা চীনের কাছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এখনও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। চীনের কাছে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রজেক্ট, এটি বাস্তবায়নে চীনের কাছে চাওয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ডিপিডিসির বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চাওয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (৯৫ কোটি মার্কিন ডলার)। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চাওয়া হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৮০ কোটি মার্কিন ডলার)। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়নে চাওয়া হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (৩৩ কোটি মার্কিন ডলার)। ইআরডির হিসাবে চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পের গ্র্যান্ট এলিমেন্ট ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড ৭ বছর, সুদের হার ১ দমশিক ৫০ শতাংশ। প্রস্তাবিত প্রকল্পে সুদের হার ২ শতাংশ। ঋণগুলো ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আরও রয়েছে দশমিক ২ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি ও ম্যানেজমেন্ট ফি দশমিক ২ শতাংশ। অন্যান্য ফি মিলে প্রায় ৫ শতাংশের উপরে সুদ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। সূত্র জানায়, এর আগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল চীন। এজন্য বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রাথমিক প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কর্ণফুলী নদীর অপর প্রাপ্তে আনোয়ারা উপজেলায় সরকার যদি একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল তৈরি করে তাহলে টানেল তৈরিতে বিনিয়োগ করবে চীন। চীনের প্রাথমিক এ প্রস্তাবটি পর্যালোচনার পর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। চীনের এ প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কর্ণফুলী নদীর ওপারে আনোয়ারা উপজেলায় ইতোমধ্যেই ১৩৫ একর সরকারী জমি রয়েছে। তাই চীনের প্রস্তাবের শর্তানুযায়ী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে কোন সমস্যা হবে না। এ প্রেক্ষিতে চীনের কাছে অর্থায়ন করতে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় চীনকে। নদীর উপরে ব্রিজ তৈরি করলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন বড় বড় জাহাজের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে টানেল তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে চীনের পক্ষ থেকে। এই টানেল দিয়ে নির্বিঘেœ গাড়িসহ সকল ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তা বাড়াচ্ছে চীন। এর আগে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের ৬ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করতে সম্মত হয় চীন। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র বিষয়ক একটি এবং বাকি ৫টি গ্যাস সরবরাহ বিষয়ক প্রকল্প রয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে। চীনের সহায়তার বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এর আগে বলেছিলেন, ‘চীন এ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশাল অঙ্কের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে চীন থেকে। ফলে দেশের অগ্রগতিতে এসব বিদ্যুত কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’ পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চীনের সহায়তায় বাস্তবায়িতব্য ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য মূল প্রকল্পের সহায়তা সহায়ক হিসেবে জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চীন সরকারের মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) যৌথ মালিকানায় পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল বেইজড থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এজন্য ২০১৪ সালের ৯ জুন চীনে সিএমসি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট এবং এনডব্লিউপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়েন্ট ভেনচার এ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেন। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ল্যান্ড এ্যাকুইজেশন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড প্রটেকশন ফর পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল বেইজড থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন।
×