ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেগম জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা আর মান্নার রিমান্ডই কী নেপথ্য কারণ?

যুবদল ছাত্রদল শিবির পেট্রোলবোমাবাজরা হঠাৎ উধাও কেন-

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুবদল ছাত্রদল শিবির পেট্রোলবোমাবাজরা হঠাৎ উধাও কেন-

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করেই অবরোধ-হরতালের মাঠ থেকে উধাও হয়ে গেছে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারার যুবদল, ছাত্রদল ও শিবিরের সহিংস সন্ত্রাসীরা। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপ কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনায় আড়ালে চলে গেছে তারা। এসব সন্ত্রাসীর হাতে সারাদেশে গত প্রায় দেড় বছরে ৩ দফায় অন্তত ৬০৮ খুন হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে সহস্রাধিক মামলা। আসামির সংখ্যা লক্ষাধিক। অনির্দিষ্টকালের টানা অবরোধ-হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের তা-বলীলায় ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে শহর, বন্দর, নগর, গ্রামগঞ্জ, জনপদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতার মুখে গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই কোথায় অন্তর্ধান হয়ে গেছে যুবদল, ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের সহিংস সন্ত্রাসীরা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র মতে, প্রথম দফায় ’১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীর মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত ও রায় ঘোষণার প্রতিবাদে একবার মাঠে নেমেছে শিবিরের সহিংস সন্ত্রাসীরা। দ্বিতীয় দফায় ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে যুবদল ছাত্রদলকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামে শিবির। তৃতীয় দফায় গণতন্ত্র রক্ষার নামে নির্বাচনের দাবি ও পরবর্তীতে এখন সংলাপের উদ্যোগের জন্য তারা মাঠে নেমে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসের তা-বলীলা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে মাঠে নামিয়ে অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যারা এই পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস প্রায় দেড় মাস ধরে দেশব্যাপী চালিয়েছে তারা হঠাৎ করেই অন্তর্ধান হলো কোথায় ? সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোটের ৩ দফায় যে ৬০৮কে হত্যা করা হয়েছে তার মধ্যে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে একজন বিজিবির সদস্য ২ জন ও ১৬ জন পুলিশ বাহিনীর সদস্য রয়েছে। সর্বশেষ রমনা পার্কের এখানে পুলিশের গাড়িতে পোট্রোলবোমা হামলায় আগুনে পুড়ে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও ১৩ জন জীবন্ত দগ্ধ হন। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ জনকে। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে কারা পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার হুকুমদাতা, অর্থদাতা, মদদদাতা সবকিছুই পরিষ্কার করেছে। পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যভাব ফিরে এসেছে। সূত্রমতে, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে সহিংস সন্ত্রাসে পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ সাধারণ নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে হতাহতের সহস্রাধিক মামলার তদন্তের অবস্থা হিমাগারের চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত প্রায় দেড় বছরের দেশব্যাপী সহিংস সন্ত্রাসে জামায়াত-শিবিরের হাতে খুন হয়েছে ৬০৮ নিহত ও অর্ধ লক্ষাধিক জন আহত করার ঘটনায় সারাদেশে দায়ের করা সহস্রাধিক মামলার লক্ষাধিক আসামি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। তারা আবারও সুযোগ বুঝে পলাতক থেকে প্রকাশ্যে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলায় মেতে উঠতে শুরু করবে না এই নিশ্চয়তা কোথায়? জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্তের অবস্থা খুবই নাজুক। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান আরও করুণ। কিছু দিন বিরতি দিয়ে তারা আবারও সেই পুরনো রণমূর্তি ধারণ করে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করার আশঙ্কা রয়ে গেছে। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল, যুদ্ধাপরাধীরদের বিচার বাতিল, যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি, মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় বাতিল ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ ও বাতিলের দাবিতে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে হতাহত করেছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৪ সালের ১ বছর ১ মাস ধরে দেশব্যাপী সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। তাদের দেশব্যাপী বছরাধিকাল ধরে সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযানের অবস্থা হিমাগারে যাওয়ার উপক্রম হয়। সুযোগ বুঝে এরই মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসে যোগ দিয়ে গত দেড় মাসে ১০১ জনকে হত্যা করেছে আগের সহিংস সন্ত্রাসীরা। সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী গত এক বছরে যে ৫০৭ জনকে হত্যাকা- ঘটিয়েছে তার মধ্যে আছে ১৫ জন পুলিশ ও ২ জন বিজিবি সদস্য। তাদের সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনায় আহত হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক। নির্মমভাবে কুপিয়ে, বেধড়ক পিটিয়ে, বোমা মেরে, ককটেল নিক্ষেপ করে, পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকা-গুলো সংঘটিত করেছে তারা। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময়ে তাদের সহিংস সন্ত্রাস কবলিত হয়ে আহত হয়েছে এই বিপুলসংখ্যক মানুষ। গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে হত্যা করা হয়েছে ১০১ জনকে। এর মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে সারাদেশে ৬৪ জেলার যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সঙ্গে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা যুক্ত হওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াত-শিবির একত্রিত হয়ে যে সহিংস সন্ত্রাস চালায় তার মধ্যে অন্যতম ছিল পেট্রোলবোমার সহিংসতা। এই পেট্রোলবোমার সহিংসতাই গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়। এখন আবার হঠাৎ করেই থেমে গেছে এই সহিংস তৎপরতা। উধাও হয়ে গেছে সহিংস সন্ত্রাসীরা। আবারও এসব সন্ত্রাসীরা নতুন করে মাঠে নামবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই তোলপাড়ের মধ্যেও বিএনপি-জামায়েতের সশস্র সন্ত্রাসীদের যখন নির্মমভাবে মানুষ হত্যা, নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে, পেট্রোলবোমা মেরে, কুপিয়ে, গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত সঠিকভাবেই এগিয়ে চলছে। এসব মামলায় যারা আসামি তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। দেশব্যাপী যেসব মামলা হয়েছে তাতে বেশিরভাগ আসামিই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
×