ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জের সাতছড়িতে ভারি সমরাস্ত্রের মজুদ

এবার ত্রিপুরা পল্লী থেকে গ্রেফতার হলো সেই অস্ত্রবাহী ট্রাকচালক

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এবার ত্রিপুরা পল্লী থেকে গ্রেফতার হলো সেই অস্ত্রবাহী ট্রাকচালক

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের আলোচিত সাতছড়ির পাহাড়ী অঞ্চল থেকে একের পর এক ভারি সমরাস্ত্র উদ্ধার হলেও জড়িত কাউকেই আটক করতে পারছিল না র‌্যাব-পুলিশ। এজন্য সংশ্লিষ্ট দুটি বাহিনীর দায়িত্ব পালন নিয়ে চলছিল নানা বিশ্লেষণ। তবে বৃহস্পতিবার ভোরে হবিগঞ্জের সেই আলোচিত ত্রিপুরা পল্লী থেকে ওইসব সমরাস্ত্র বহনকারী ট্রাক চালক ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি আশীষ দেববর্মাকে (৩৫) গ্রেফতার করে দায়িত্ব পালনে শুধু অনন্য দৃষ্টান্তই স্থাপন করেনি বরং সংশ্লিষ্ট জেলাসহ গোটা সিলেট বিভাগের উৎকণ্ঠিত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার আশার সঞ্চার করেছে হবিগঞ্জ পুলিশ। এই আলোচিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর এমনটিই ভাবছে পুলিশ ও সাধারণ মানুষ। জানা যাবে, সাতছড়িতে একের পর এক বিমান ও কামান বিধ্বংসীর মতো ভারী সমরাস্ত্র মজুদ, বিক্রির সঙ্গে কারা জড়িত, কোথা থেকে এসব অস্ত্র ও গোলা বারুদ নিয়ে আসা হয় এবং কি উদ্দ্যেশ্য এসব অস্ত্র আনা হচ্ছে বা হবিগঞ্জের এই পাহাড়ী এলাকাটিকেই বেছে নেয়া হলো। শুধু তাই নয়, এই সাতছড়ির ত্রিপুরা পল্লী, পাহাড় বা আশপাশ এলাকার কোথাও আরও ওই রকম সমরাস্ত্র মজুদের বাঙ্কার রয়েছে কিনা তাও জানা হয়ত সহজ হবে। আর তারই প্রেক্ষিতে হয়ত নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভব হবে সাতছড়িকে কলঙ্কমুক্ত করা। এছাড়া বগুড়ার কাহালু থানা এলাকা থেকে গোলা বারুদ উদ্ধার ও জড়িতদের বিষয়েও আরও তথ্য-উপাত্ত মিলবে। ধারণা করা হচ্ছে আশীষ দেব বর্মার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে আশিষ দেব বর্মাকে গ্রেফতারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে পুলিশ। এ সময় এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোরে দীর্ঘ ১১ বছর ৮ মাস পর আশিষ দেব বর্মাকে সাতছড়ির ত্রিপুরা পল্লীর ফরেস্ট বস্তি থেকে গ্রেফতার করতে সচেষ্ট হয় পুলিশ। তিনি আরও জানান, বগুড়া জেলার কাহালু থানায় আটক অস্ত্র ও গোলা বিস্ফোরক দ্রব্যের ২ মামলার অন্যতম আসামি আশীষ। এদিকে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে একই সময় মিডিয়া ব্রিফিংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসপি হেডকোয়ার্টার মাসুদুর রহমান মনির জানান, বিগত ২০০৩ সালের ২৮ জুন এই কাহালু থানা এলাকা থেকে একটি ট্রাকের মধ্যে আনারস দ্বারা আবৃত অবস্থায় ৭০ হাজার রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। তখন এই ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কিন্তু এই ট্রাকের চালক আশীষ পালিয়ে যায়। একই দিন অস্ত্র আইনের ৯ (চ), বিস্ফোরক আইনের ৪ ধারা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাহালু থানায় ৪ মামলা দায়ের করে পুলিশ। তখন আদালত আশীষসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সাতছড়ি থেকে সমরাস্ত্র উদ্ধার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরীসহ পুলিশের নানা সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের ওই স্থান থেকে একের পর এক সমরাস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এই আশীষ একজন সন্দেহভাজন। পুলিশ ধারণা করছে, তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বগুড়ার কাহালু ও হবিগঞ্জের সাতছড়ি থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদ সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশীষ গ্রেফতারের বিষয়টি হবিগঞ্জ পুলিশের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য।
×