ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ ॥ আতঙ্কের কিছু নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ ॥ আতঙ্কের কিছু নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত কোন সোয়াইন ফ্লু রোগী শনাক্ত হয়নি। বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে বিশেষ সার্ভিলেন্স টিম কাজ করছে। সারাদেশে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ওষুধ, ভ্যাকসিনসহ সব ধরনের মেডিক্যাল উপকরণ মজুদ রয়েছে। আর চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের এ বিষয়ে দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ । বৃহস্পতিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ শরফুদ্দিন আহমেদ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমানসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, অনেক বছর ধরেই সোয়াইন ফ্লুর বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার। দেশে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মৌসুমী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। ভাইরাসসহ যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রতিবারই সফলতা দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। আফ্রিকায় ব্যাপক আকারে সংক্রমিত ইবোলা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে। দীর্ঘ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফ্লু মোকাবেলা করে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা। তাই ফ্লু মোকাবেলায় বিশেষ সার্ভিলেন্স টিম অনেক বছর ধরেই অব্যাহত রয়েছে। এই পূর্ব প্রস্তুতির সঙ্গে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ মজুদ রাখা হয়েছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ দেশের ৬৪ জেলা হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট পৃথকভাবে খোলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওই ইউনিটে প্রেরণ করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে স্থাপিত সাতটি থার্মাল স্ক্যানারগুলোকে বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের জ্বর পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সব বন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত মেডিক্যাল টিমগুলোকে সতর্ক থেকে এ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সবাইকে ভালভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাবান দিয়ে হাত ধুলেই সোয়াইন ফ্লুর জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখনও সোয়াইন ফ্লুর মৌসুম শুরু হয়নি। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন মৌসুমী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল। মাত্রা কম থাকলেও গত ২০১০ সালেও সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। কিন্তু দেশে গত কয়েক বছর সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ ভাইরাস নিয়ে ভয়ের প্রয়োজন নেই। দেশে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা পুরানো হয়ে গেছে। এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মানুষের প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়ে গেছে। ডাঃ মাহমুদুর রহমান আরও জানান, সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস ছড়ায় নিয়মিত ফ্লুর সংক্রমণের মতোই, মূলত ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের কফ ও হাঁচির মাধ্যমে। তবে সংক্রমিত বস্তু স্পর্শ করে হাত, নাক ও মুখে লাগালেও তা সংক্রমিত হতে পারে। নতুন এইচ১এন১ সংক্রমণ নানারকমের উপসর্গ ঘটাতে পারে ফ্লু জ্বরের, যেমনÑ জ্বর, কফ, গলা খুসখুস, শরীরে ব্যথা, মাথা ধরা, গা শিরশির করা ও ক্লান্তি। অনেকের হয় বমি ভাব, বমি ও তরল মল। সবাইকে জানতে হবে নতুন এ ফ্লু সম্পর্কে। রোগীদের কাছাকাছি যাওয়া চলবে না। ফ্লুর মতো অসুখে আক্রান্ত মনে হলে, লক্ষণ বা উপসর্গ শুরু হওয়ার পর সাত দিন অথবা লক্ষণ বা উপসর্গ মুক্ত হওয়ার পর আরও ২৪ ঘণ্টা ঘরে অবস্থান করতে হবে। এতে অন্যজন সংক্রমিত হওয়া বা ভাইরাসের আরও বিস্তার হওয়া রোধ হবে। কোথাও ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটলে সে অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শমতো স্কুল বন্ধ করা, ভিড় এড়ানো এবং সামাজিক সম্মেলন বা মেলামেশা এড়ানোর মতো কাজ করতে হবে। প্রচ- তাপমাত্রায় জ্বর, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, কাশি এ রোগের লক্ষণ বলে জানান ডাঃ মাহমুদুর রহমান। অধ্যাপক এ কে এম শামসুজ্জামান জানান, সোয়াইন ফ্লুকে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনও মহামারি ঘোষণা করেনি ভারত। তবে ওই দেশে এখন পর্যন্ত ৯২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৮০ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ভারতে গুজরাট রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ২২৫ জন মারা গেছে। সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে সংক্রমণ ঘটনায় কিছুটা উদ্বিগ্ন আমরা। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস ২০০৯ সালের এপ্রিলে মেক্সিকোয় প্রথম ধরা পড়লেও বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় জুন মাসে। এত দ্রু মেক্সিকো থেকে এ ভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি সবাইকে অবাক করে দেয়। এরপর থেকেই সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বাংলাদেশে ঘটতে থাকে একের পর এক আতঙ্ক সৃষ্টির ঘটনা। এ সংস্থাটি ২০০৯ সালের ১১ জুন সোয়াইন ফ্লুকে মহামারি ঘোষণা করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এমন ভয়ঙ্কর বার্তা ঘোষণাকালে বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল মাত্র। আর ওই সময় সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় সফলতা দেখায় বাংলাদেশ।
×